মধুখালীর ঘটনা
চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা
প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপলস্নীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন এবং মেম্বার অজিত বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করলে উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই দুইজনকে আত্মসমর্পণ করে আইনি সুরক্ষা নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মধুখালীর ঘটনা পরবর্তী সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘোষণা দেন।
এ সময় তিনি জানান, এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির অনুরোধের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটির সময় আরও সাতদিন বাড়ানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন একজন হেভিচু্যয়াল অফেন্ডার স্বভাবগত অপরাধী। কোথায় কখন কিভাবে লুকিয়ে থাকতে হয় সেটি তিনি ভালো জানেন। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন রেখে গেছেন। এর আগে আমরা মাগুরায় তার অবস্থান শনাক্ত করি। কিন্তু যখন তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয় তখন যশোরে পালিয়ে যান। এরপর যশোরেও তাকে
ধরতে অভিযান চালানো হলেও পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপনকে এর আগে দুইবার বরখাস্ত করা হয়েছিল। একবার ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় এবং আরেকবার টিসিবির কার্ড দুর্নীতির কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। দুবারই উচ্চ আদালতে আপিল করে তিনি পদ ফিরে পান। এ কারণে তার মধ্যে এক ধরনের বেপরোয়া মনোভাব তৈরি হয়েছে। তিনি ভেবেছিলেন, যত অপরাধই করুক না কেন তিনি পার পেয়ে যাবেন।
ঘটনার পর ধর্মমন্ত্রীর সফরের সময়ও চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন মন্ত্রীর প্রোগ্রামে দেখা গেছে এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, তার দ্বৈত ভূমিকার কারণে তাকে সেভাবে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি। তবে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সবার সহযোগিতা চাই। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা চাই। কেউ যদি অন্য আসামিদের অবস্থানও জানাতে পারেন তাহলে তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়া হবে।
তিনি পঞ্চপলস্নীর ঘটনায় গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, এ ঘটনার পর ফরিদপুরের সাংবাদিকরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে এমন একটি নিউজও করে নাই। প্রধানমন্ত্রীও ফরিদপুরের সাংবাদিকদের এ আচরণে তাদের প্রশংসা করেছেন। ঘটনার পর আমাদের সঙ্গে ওই রাতে ঘটনাস্থলেও থেকেছে। তারা প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি যথাযথভাবে উপস্থাপন করায় এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিষবাষ্প ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল সেই সুযোগ কেউ পায়নি।
তিনি বলেন, যদি কেউ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পাঁয়তারা চালানোর চেষ্টার কোনো খবর থাকে সে বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি।
তবে কোন কোন মহল এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর মতো এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি আমাদেরও। একটি আন্দোলনের ডাক দিলে সেখানে নানা ধরনের লোক ঢুকে যায়। অবরোধের সময়ও একটি মহল সেখানে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে চালানোর চেষ্টা করেছে।
তিনি নিহতদের পরিবারকে ধর্মমন্ত্রী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার তথ্য তুলে ধরেন এবং এ ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ও তাদের পরিবারকে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্যসামগ্রী প্রদান ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান। তাই এ ঘটনাকে নিয়ে যাতে কোনো মহল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সবার সহযোগিতা চান। এ ঘটনাকে যাতে সাম্প্রদায়িক উসকানির কাজে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো বাড়িতে আক্রমণ করে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। এজন্য আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত এবং তদন্ত রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত মধুখালীতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলেও জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ডিডিএলজি'র উপপরিচালক রওশন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াসিন কবীর, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনিম, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা ছিলেন।