নেপালের জলবিদু্যৎ কিনছে ভারত, অপেক্ষায় বাংলাদেশ
প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বিদু্যৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও নেপাল প্রায় দশ বছর ধরে আলাপ আলোচনার মধ্যে থাকলেও এখনো কোনো চুক্তি এবং তার সফল বাস্তবায়ন হয়নি।
সবশেষ ভারত-বাংলাদেশ গ্রিড লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ আনার যে চুক্তি এপ্রিল মাসে সম্পাদনের কথা ছিল সেটিও পিছিয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ আশা করছে খুব শিগগিরই এই চুক্তি সম্পাদন করে বিদু্যৎ আমদানি শুরু করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ও নেপাল বিদু্যৎ খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে প্রথম একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
ওই সমঝোতার আওতায় দুই দেশের মধ্যে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে বিদু্যৎ আমদানির এমনকি নেপালে জলবিদু্যৎ প্রকল্পে বাংলাদেশের বিনিয়োগের বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ যখন নেপালের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে তখন নেপালে বিদু্যৎ ঘাটতি ছিল। বর্তমানে নেপাল বর্ষা মৌসুমে চাহিদার তুলনা অতিরিক্ত বিদু্যৎ উৎপাদন করছে এবং বাড়তি বিদু্যৎ ভারতে রপ্তানি শুরু করেছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি নেপাল থেকে ভারতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ রপ্তানির আলাদা দুটি চুক্তি সই হয়েছে। একই সঙ্গে জলবিদু্যতের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে নেপাল থেকে ভারতে আগামী ১০ বছরে আরও ১০ হাজার
মেগাওয়াট বিদু্যৎ রপ্তানির পরিকল্পনা ঘিরে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা এবং কাজ শুরু হয়েছে।
নেপালে বাংলাদেশের আগ্রহ
বাংলাদেশ গত ১০ বছরে নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বিদু্যৎ আমদানি-রপ্তানি, জলবিদু্যৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ, সঞ্চালন লাইন নির্মাণসহ পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে একটি ক্ষেত্রেও চুক্তি সই করে এর সফল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
এ সময় বাংলাদেশ ভারত থেকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চুক্তি করে বিদু্যৎ আমদানি শুরু করেছে। এখন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত বহররমপুর-ভেড়ামার এইচভিডিসি গ্রিড লাইন দিয়ে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদু্যৎ আমদানি শুরু করতে চায় বাংলাদেশ।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিদু্যৎ খাতে নেপাল-বাংলাদেশ সহযোগিতার আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিয়েছেন।
নেপালের সঙ্গে বিদু্যৎ খাতে সহযোগিতার অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, 'আপার কার্নালি পাওয়ার পস্ন্যান্ট যেটা ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর ডেভেলপ করছে, সেটা থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ কেনার জন্য প্রথম যে প্রক্রিয়া শুরু করি, সেটা অনেকদূর এগিয়েছে।'
'আমাদের জিএমআর'র সঙ্গে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন। এর মধ্যে আবার ৪০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ, যেটা আমরা ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে আমদানি করব, সেটাও সবকিছু চূড়ান্ত। এ পর্যায়ে আমরা আছি।'
মোহাম্মদ হোসেন বলেন, 'যেহেতু ভারতের বর্ডার এবং গ্রিড ব্যবহার করতে হবে, সে কারণে ইন্ডিয়ার রুলস রেগুলেশন বা তাদের যে ক্রসবর্ডার গাইডলাইন বা ক্রসবর্ডার যে পলিসি সেটাকে মেইনটেইন করেই করতে হবে।'
'টেকনিক্যাল কমার্সিয়াল ইসু্যগুলো আমরা দেখব, কিন্তু এগুলোর ওভারঅল যেহেতু একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের বা তিনটি দেশের বিষয়, তাই এখানে কূটনীতির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।'
জলবিদু্যৎ আমদানির পাশাপাশি নেপালের ৬৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার সুনকোসি-৩ জলবিদু্যৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
এ ছাড়া বিদু্যৎ আমদানির জন্য ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল-বাংলাদেশ ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করতেও দুই দেশ আলোচনা করছে। বিদু্যৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে ভারত-নেপাল বাংলাদেশ, ত্রিপক্ষীয় একটি ব্যবস্থাও চায় বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অগ্রগতি দেখা গেলেও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে আছে দীর্ঘসূত্রতা।
বাংলাদেশের সঙ্গে যেহেতু নেপাল বা ভুটানের কোনো সীমান্ত নেই, তাই আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য ভারতের সমর্থন বাংলাদেশের একান্ত প্রয়োজন।
গতি আসবে কীভাবে?
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত ত্রিপক্ষীয় কোনো চুক্তির চেয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে বেশি আগ্রহী হবে, এটাই স্বাভাবিক। যে ৪০ মেগাওয়াট আমদানির কথা বলা হচ্ছে, এটা খুবই সামান্য বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায়। নেপাল-ভুটানে সম্ভাবনা আরও অনেক বেশি রয়েছে।
'আগে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে যে, তাদের ওপর দিয়ে আমরা বিদু্যৎ নিয়ে আসতে পারব নেপাল ও ভুটান থেকে। এটা না করা পর্যন্ত এমওইউ, চুক্তি অথবা এগ্রিমেন্ট কোনো ফলদায়ী হবে না।'
'ভুটানও কিন্তু কখনোই আমাদের সঙ্গে নেগোসিয়েট করতে পারেনি, কারণ তারা জানে যে, ভারত এখানে মূল ভূমিকা পালন করবে এবং পাওয়ার ট্রেড, যেটা নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু হয়ও, সেটা কিন্তু আল্টিমেটলি আমরা সবাই জানি যে, ভারতের ওপর নির্ভর করবে। কারণ, লাইনটাতো আসতে হবে ভারতীয় ভূখন্ডের ওপর দিয়ে এবং সে ক্ষেত্রে ভারত টার্মস ডিটারমিন করতে পারবে।'
\হতৌহিদ হোসেন মনে করেন, বিদু্যৎ জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য ভারত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। যে কোনো বিষয়ে দ্রম্নত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কারিগরি এবং দাপ্তরিক কাজের বাইরে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন জানান, 'এখানে মূল জিনিসটা হবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ভারতের এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের এই দুই নেতৃত্ব মিলে একমত হতে হবে যে, আমরা এই শর্তে এভাবে এই জিনিসটা করব।'
'আমলাতান্ত্রিক কিছু জটিলতা থাকতে পারে, সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে, টেকনিক্যাল কিছু বিষয় থাকতে পারে। সেটা এ দেশের, ওই দেশের এবং সে দেশের ইঞ্জিনিয়াররা মিলে ঠিক করতে পারবে, কিন্তু মূল জিনিসটা হচ্ছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।'
আশাবাদী বাংলাদেশ
নেপাল বা ভুটান থেকে বড় পরিসরে বিদু্যৎ আমদানি করতে হলে ভারতের সহযোগিতা এবং সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়। তবে ভারতের তরফ থেকে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাস রয়েছে বলেই জানাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিদু্যৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নেপালের সঙ্গে বিদু্যৎ খাতে সহযোগিতার প্রকল্পগুলোতে ভারতের সমর্থন পাবে বাংলাদেশ। বিবিসি বাংলা