বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ভারতকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আধিপত্যবাদ, আগ্রাসন, গণতন্ত্র হত্যার জন্য বাংলাদেশের মানুষ সামাজিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে আপনাদের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য। কারণ বাংলাদেশের মানুষ একাত্তর সালে খালি পায়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল, রাওয়াল পিন্ডি থেকে মুক্ত হয়েছিল দিলিস্নর দাসত্ব গ্রহণ করার জন্য নয়।
শুক্রবার সকালে 'সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা ও ভারতীয় আগ্রাসন'-এর প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে গণতন্ত্র ফোরাম।
অবস্থান কর্মসূচিতে জয়নুল আবদিন ফারুক আরও বলেন, 'আমি একটি পত্রিকায় দেখেছি, ভারতের ৫২৭টি পণ্যের মধ্যে বিষক্রিয়া পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেগুলো নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আরেকটি পত্রিকায় দেখালাম,
তাদের দুইটি ওষুধে ক্যানসারের মিশ্র উপাদান পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুর, হংকং সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।'
আজকেও (শুক্রবার) সীমান্তে একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'যদি বন্ধু হও, যদি আমাদের প্রিয় ব্যক্তি হও, যদি আমাদের প্রতিবেশী হও তাহলে সীমান্তে অহরহ গুলি কেন? তাই আজকে বাংলার জনগণ, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই শুরু করেছে।'
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, 'আমরা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নই, আমরা ভারতের বন্ধু হতে চাই। কিন্তু যে বন্ধু আমাদের শোষণ করবে, যে বন্ধু আমাদের টিপাইয়ের ন্যায্য হিস্যা দেয় না সে কি বন্ধ হতে পারে? কোনোদিনও বন্ধু হতে পারে না। তাই আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করে বলতে চাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করো, আগ্রাসন নীতি পরিহার কর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করো। কারণ আপনার দেশে গণতন্ত্র থাকবে আর আমার দেশে গণতন্ত্র যাতে না থাকে সেই ব্যবস্থা করবেন বাংলার মানুষ তা কোনোদিন গ্রহণ করবে না।'
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'আমরা আগ্রাসন মানি না, আমরা সীমান্ত হত্যা মানি না, আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করব এ সামাজিক আন্দোলন ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।'
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'লজ্জা হয় না আপনাদের? ক্ষমতাসীন দল হিসেবে বলেন, সব ক্ষেত্রে নাকি বিএনপির ষড়যন্ত্র আছে। আমরা নাকি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চাই। ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আপনারা (আওয়ামী লীগ) গেছেন। ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি করেছেন আপনারা। মঈন-ফখরুদ্দিনের সঙ্গে রাতের অন্ধকারে আঁতাত করেছেন আপনারা। আমরা (বিএনপি) ষড়যন্ত্র বিশ্বাস করি না। আমার নেত্রী ষড়যন্ত্র বিশ্বাস করে না। আমার নেতা তারেক রহমান ক্ষমতায় যেতে চায়, এক মাথা এক ভোটে, জনগণকে নিয়ে, ষড়যন্ত্র করে নয়।'
গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপুর সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমতুলস্নাহ, ওলামা দলের সদস্য সচিব মাওলানা কাজী আবুল হোসেন, তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ওলামা দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ও যুব জাগপার সভাপতি মীর আমির হোসেন আমু।
'জনগণের দাবি সরকারের কানে পৌঁছায় না'
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায়। এ কারণে জনগণের দাবি ও আহাজারি তাদের কানে পৌঁছায় না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার দুপুরে শান্তিনগর মোড়ে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুস সালাম বলেন, সারাদেশ আজ দাবদাহে পুড়ছে। প্রধানমন্ত্রী আজ কোথায়? কোথায় গিয়েছেন? কী করছেন। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজ দলের দায়িত্বে নেই। তিনি বিএনপির দায়িত্বে আছেন। বিএনপি কী করল, খালেদা জিয়া কী করলেন, সেদিকেই তার দৃষ্টি। তিনি সড়কের মন্ত্রী। প্রতিদিন সড়কে মানুষ মারা যাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
তিনি বলেন, সনদবিহীন ড্রাইভার দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চলছে বলেই সড়কে আজ লাশের মিছিল। সড়কের মতোই সনদবিহীন সরকার আজ ক্ষমতায়। তারা জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, সাধারণ মানুষ এ সরকারের আমলে সবদিকেই অশান্তিতে আছে। জীবনের নিরাপত্তা নেই। বাকস্বাধীনতা নেই। এর মধ্যে তীব্র দাবদাহে জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। কিন্তু কোনো কিছুতেই সরকারের ভ্রম্নক্ষেপ নেই। জনগণকে অশান্তিতে রেখে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণ করছেন। তার মন্ত্রীদের লাগামহীন কথা মানুষকে আরও বেশি পীড়া দিচ্ছে।
পল্টন থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী হাসিবুর রহমান শাকিলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের কর্মকর্তা মাহফুজ কবির মুক্তা, পল্টন থানা বিএনপি নেতা আবদুলস্নাহ সেলিম, সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, শাহাদাত হোসেন তুহিন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর) বিএনপির সভাপতি গাজী সালাহউদ্দিনসহ পল্টন থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতারা।