রাজশাহীতে এপ্রিলে পানিতে ডুবে ১৬ জনের মৃতু্য
প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রাজশাহী অফিস
এপ্রিল মাসের শুরু থেকে চলছে তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহ কখনও মাঝারি আবার কখনও তীব্ররূপ ধারণ করছে। ফলে গরম থেকে রক্ষা পেতে বার বার গোসলে নামছে শিশু-কিশোররা। অসতর্কতায় যাচ্ছে প্রাণও।
রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মাসে পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে ১৬ জনের। যার অধিকাংশ শিশু-কিশোর। সবশেষ মঙ্গলবার পানিতে ডুবে তিন কিশোরের মৃতু্য হয়েছে। আর এ মাসে পদ্মা নদীতে ডুবে মারা গেছে ৯ জন।
পদ্মা নদীর শ্যামপুর ঘাটে গোসল করতে নেমে মঙ্গলবার তিন কিশোর মারা গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। তারা হলো- কাটাখালী বাখরাবাজ এলাকার রেন্টুর ছেলে যুবরাজ (১২), লিটনের ছেলে আরিফ (১৩) ও নুর ইসলামের ছেলে জামাল (১২)।
এর আগে, গত ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘায় বিয়ে বাড়িতে এসে পানিতে ডুবে মারা যায় জান্নাত খাতুন (৮)। তবে এখনও ঝিলিক খাতুন (১২) নামের আরেক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
গত ১৯ এপ্রিল পদ্মা নদীর মুর্শিদপুর এলাকার খেয়াহাটের ডুবে মারা যায় উপজেলার খায়েরহাট গ্রামের সুজন আলীর ১০ বছরের ছেলে সিয়াম হোসেন। সজিব ২০ এপ্রিল বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীতে নৌকায় করে গোসল করতে গিয়ে মারা যান। আসাদ হোসেন (১৮) নামেও এক তরুণ মারা যান।
২১ এপ্রিল পবায় পদ্মা নদীতে গোসল করতে নামেন বাপ্পি হোসেন (১৬) ও মনির হোসেন (২০)। পরে ডুবে মারা যান তারাও।
গোসল করতে নেমে আল আমিন (১২) নামের এক শিশু এবং পুকুরে সাঁতার শিখতে গিয়ে রানা মিয়া (২৫) নামের এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। গত ২ এপ্রিল দুপুরে ও বিকালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রামনাথপুর এবং খয়েরবাড়ি গ্রামে পৃথক এ দুর্ঘটনা ঘটে। আল আমিন উপজলার মুলাডুলি ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম বাশারের ছেলে। আর ঈশ্বরদী শহরের পূর্বটেংরী ঈদগাহ পাড়া এলাকার কাশেম আলীর ছেলে রানা মিয়া এবং খয়েরবাড়ি গ্রামের ফোরকান শেখের জামাই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক ঘটনায় নদীতে ডুবে তিন শিশুর মৃতু্য হয়েছে। ৬ এপ্রিল দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার তর্ত্তিপুরে এক ও ভোলাহাটের গোহালবাড়িতে দুই শিশুর মৃতু্য হয়। তারা হলো- প্রিয়াঙ্কা (১১) শিবগঞ্জ উপজেলার রাণীহাটি ইউনিয়নের কামারপাড়ার রূপ কুমারের মেয়ে ও মো. আজিজুল হক (১১) ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ি ইউনিয়নের রাধানগর কলোনির সুবোধ মিস্ত্রির ছেলে এবং মো. জিহাদ (১১) আব্দুল কাদিরের ছেলে।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আবু সামা বলেন, 'রাজশাহীতে কয়েকদিন ধরে পানিতে ডুবে মৃতু্যর ঘটনা বেড়েছে। আমার ধারণা করছি, গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে কিশোররা নদীতে গোসল করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যারা মারা যাচ্ছে তাদের অনেকেই সাঁতার জানত না। আবার অনেকেই সাঁতার জানত। কিন্তু একজন ডুবে যাচ্ছে দেখে আরেকজন ধরতে গিয়ে দুজনই ডুবে মারা যাচ্ছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। শিশু-কিশোর যারা সাঁতার জানে না তারা যাতে নদীতে গোসল করতে না যায়, সেদিকে নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এটি করা গেলে মৃতু্য অনেকটাই কমে আসবে।'
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর 'বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২' প্রতিবেদন অনুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃতু্যর ৭ শতাংশের বেশি ঘটে পানিতে ডুবে।
গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন সমষ্টির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণমাধ্যমে পানিতে ডুবে ৮৮০টি মৃতু্যর ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বয়স ছিল ৯ বছরের নিচে। এ হার ২০২২ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। মোট মৃতু্যর এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঘটেছে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে।
বাংলাদেশ জাতীয় সাঁতার দলের সাবেক কোচ আলমগীর হোসেন বলেন, 'সাঁতার না জানার কারণে দেশে প্রতি বছরই বহু মানুষ মারা যায়। শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের সাঁতারও শেখাতে হবে। কোনো শিশু ডুবে মারা গেলে তার শিক্ষার কোনো দাম থাকবে না। জীবন বাঁচাতে তাই সাঁতার শেখাতে হবে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।'
\হ