পৃথক দুটি প্রস্তাবে দুই কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিসহ সার ও ডাল আমদানির আটটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৯২৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৬ টাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুই কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ও গানভর প্রাইভেট লিমিটেড। এতে মোট খরচ হবে ৯৩৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৮৭৬ টাকা।
তিনি জানান, 'বিদু্যৎ ও জ্বালানির দ্রম্নত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১' এর আওতায় স্পট মার্কেট সিঙ্গাপুরের গানভর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এলএনজি আমদানিতে ৪৬৯ কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৫১৮ টাকা ব্যয় হবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.৮৬৩৭ মার্কিন ডলার হিসেবে কেনা হচ্ছে এই এলএনজি, যার আগের দাম ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৪৯৬৫ মার্কিন ডলার।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অপর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৬৪ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৮ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ কেনা হচ্ছে ১০.৭৩৩৭ মার্কিন ডলার হিসেবে যার আগের দাম ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৬৮০০ মার্কিন ডলার।
তিনি জানান, এর আগে গত ৩ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড থেকে তিন কার্গো এলএনজি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।
৯২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকায় কেনা হচ্ছে সার
সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, সৌদি আরব, মরক্কো, রাশিয়া ও চীন থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টন সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট খরচ হবে ৯২৭ কোটি ৭১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে চীন ও সৌদি থেকে এক লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি, মরক্কো থেকে ৩০ হাজার টন টিএসপি ও রাশিয়া থেকে ৩০ হাজার টন এমওপি সার আনা হবে।
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের মা'আদেন এর কাছ থেকে চতুর্থ লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রতি টনের দাম পড়বে ৫৫৪ মার্কিন ডলার যা আগে ছিল ৫৮১ মার্কিন ডলার।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর ওসিপি এস এ-এর কাছ থেকে চতুর্থ লটের ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১২৫ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৭৯.৫০ মার্কিন ডলার যা আগে ছিল ৩৮৬ মার্কিন ডলার।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন 'প্রডিন্টরগ'-এর কাছ থেকে ৬ষ্ঠ লটের ৩০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর প্রতি টন সারের দাম পড়বে ২৮৯.৭৫ মার্কিন ডলার।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় চীনের বনিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেডের কাছ থেকে প্রথম লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি টনের দাম পড়বে ৫২৬.২৫ মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় হবে ২৩১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
অপর প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় চীনের বনিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেডের কাছ থেকে দ্বিতীয় লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি টনের দাম পড়বে ৫২৬.২৫ মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় হবে ২৩১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
কেনা হচ্ছে সাড়ে ৬১ কোটি টাকার মসুর ডাল :মো. মাহমুদুল হোসাইন খান আরও জানান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ৬ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৬১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়ছে ১০২ টাকা ৯০ পয়সা। তিনি বলেন, '৫০ কেজির বস্তায় এই মসুর ডাল কেনা হবে নাবিল নাবা ফুডস প্রডাক্টস লিমিটেডের কাছে থেকে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০২ টাকা ৯০ পয়সা। আগের মূল্য ছিল ১০২ টাকা ৭৫ পয়সা।'
এর আগে, গত ৩ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ডালের দাম ধরা হয় ১০২ টাকা ৭৫ পয়সা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে পাঁচ হাজার টন ও নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড থেকে পাঁচ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়।