রানা পস্নাজা ধসের ১১ বছর
নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা-প্রতিবাদী সমাবেশ
প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
সাভারে রানা পস্নাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নিহতদের স্বজন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শ্রদ্ধা জানাতে আসা শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা ভবন মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনেরও দাবি জানান হয়।
বুধবার সকালে শিল্প পুলিশ-১ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা রানা পস্নাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া 'হাজারও প্রাণ ও স্বপ্ন হত্যার বিচার চাই এবং মৃতদের স্মরণ করো জীবিতদের জন্য লড়াই করো' আহ্বানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। রানা পস্নাজার সামনে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা অর্পণ শেষে বেলা ১১টায় উদ্ধারকর্মী হিমালয় হিমুর আত্মাহুতির ছয় বছরে বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে হিমুর মৃতু্যর স্থানে শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়।
পরে এক প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, বিআইজিডির গবেষক মাহীন সুলতান। আরও বক্তব্য রাখেন- গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, নিহত শ্রমিক আঁখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার, আহত জেসমিন, নিহত শাওনের বাবা আজিজ মিয়া, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা আক্তার, নিহত শাহীদার মা তাহেরা এবং আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, সারা দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা রানা পস্নাজা ভবন ধসে হাজারও প্রাণ ও স্বপ্ন নাই হওয়ার ঘটনা। ১১ বছরেও যথেষ্ট সাক্ষী না পাওয়ার খোঁড়া যুক্তিকে সামনে এনে বিচার প্রক্রিয়া ধীর করে রাখা হয়েছে। অথচ দোষীদের শনাক্ত করার মতো প্রমাণ ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই নিহিত আছে।
তারা বলেন, বিচারিক আদালতের রায় অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি থেকে ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির আদেশ আছে আপিল বিভাগের। এই সময়ের মধ্যে যাতে মামলা শেষ হয় এবং রানা পস্নাজার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পায়, এর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, রানা পস্নাজার ঘটনাকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ইতিহাসে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তরুণদের লড়াইয়ে প্রেরণা হিসেবে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। আর সে কারণে রানা পস্নাজার সামনের স্থানটিতে স্থায়ী বেদি নির্মাণ এবং স্থানটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
তারা বলেন, গত ১১ বছর ধরে রানা পস্নাজার এই ঐতিহাসিক জায়গাটি নানাভাবে আবর্জনার স্তূপে, কখনো দখল করে দোকানপাট বসানো হয়েছে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। রানা পস্নাজা স্থানটি আবর্জনার স্তূপে পরিণত না করে এটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন-বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন জানান, রানা পস্নাজা ধসের এই দিনে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা ও আহত শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠানে আসেন। শ্রমিক সংগঠনগুলো দিবসটি স্মরণ করে নানা আয়োজন করে। তিনি বলেন, 'রানা পস্নাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছরে এসেও আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। আহত ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন, সুচিকিৎসা ও ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রম্নত বিচার করতে হবে।'
সকালে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শহীদ বেদিতে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে- টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ল্যাম্পপোস্ট, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাভার শাখা, গণমুক্তির গানের দল, শিল্প পুলিশ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী লীগ, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ), গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি, এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ জোট প্রভৃতি।