তীব্র দাবদাহে কারাগারে সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
চলমান তীব্র দাবদাহে সারাদেশের কারাগারগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বন্দিদের মধ্যে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ফ্যান লাগানো হয়েছে। বন্দিদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ চলছে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বইছে তীব্র দাবদাহ। এমন দাবদাহে সাধারণ মানুষের মধ্যেই বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। তীব্র গরমের মধ্যে বন্দিদের মধ্যেও রয়েছে চরম অশান্তি। এজন্য বন্দিদের সর্বোচ্চ ভালো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কারাগারে দায়িত্বরত জেল সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দাবদাহে কারাগারের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ যায়যায়দিনকে বলেন, কারাগারে বন্দিদের মধ্যে পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক রাখা হয়েছে। বন্দিরা যাতে নির্বিঘ্নে বাতাস পেতে পারেন, এজন্য প্রচুর ফ্যান লাগানো হয়েছে। বিদু্যৎ বিভ্রাটের বিষয়টি মাথায় রেখে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেনারেটর। যাতে কারাগারে থাকা বন্দিরা আলো-বাতাস পান। বন্দিদের মধ্যে খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। নিয়মিত কারাবন্দিদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। যাতে কোনো বন্দি অসুস্থ হয়ে না পড়েন। বন্দিদের দেওয়া হচ্ছে সুষম খাবার। যাতে তীব্র দাবদাহে কোনো প্রকারের অসুবিধা না হয়।
তিনি আরও বলেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক তীব্র দাবদাহের মধ্যে সারাদেশের প্রতিটি কারাগারে থাকা বন্দিদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সব বন্দির নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। যা অব্যাহত রাখারও নির্দেশনা রয়েছে।
কারাগারে তীব্র দাবদাহের মধ্যে বন্দিরা কেমন আছে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে কর্মকর্তা এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সদ্য বদলিকৃত জেলার মো. নাশির আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, কারাগারে বন্দিদের মধ্যে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। যাতে বন্দিরা ঘন ঘন পানি পান করতে পারেন। এ ছাড়া বন্দিদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে খাবার স্যালাইন। যাতে কোনোভাবেই প্রচন্ড গরমে ঘামে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণ পানি বের না হতে পারে। কারণ শরীর থেকে অধিক পরিমাণে লবণ পানি বের হলে হিটস্ট্রোক বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য বন্দিদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে অনেক বন্দিদের জন্য যেসব বন্দি খাবার তৈরি করেন, তাদের রান্না ঘরে প্রচন্ড তাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। একদিকে দাবদাহ আরেক দিকে চুলার তাপ রান্নায় নিয়োজিত বন্দিদের মারাত্মকভাবে নাজেহাল করে ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কায় কাজ বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে অধিক সংখ্যক বন্দি। যাতে বন্দিরা তুলনামূলক কম সময়ে রান্নাঘরে থাকেন। এ ছাড়া চুলাগুলো থেকে তাপ বেরিয়ে তা যাতে বন্দিদের শরীরে লাগতে না পারে, এজন্য শেড তৈরি করা হয়েছে। রান্নায় নিয়োজিত বন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম, বাতাস ও স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পর বিরতি দিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে রান্নায় নিয়োজিত বন্দিদের। কারণ প্রচন্ড তাপে রান্না ঘরে টেকা প্রায় অসম্ভব। তাদের শরীর স্বাস্থ্যেরও নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
জেলার মো. নাশির আহমেদ জানান, চলতি মাসের শেষদিকে অথবা আগামী মাসের প্রথম দিকে বদলিকৃত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কেরানীগঞ্জে যোগদান করার কথা রয়েছে। সেখানেও বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, দেখা-সাক্ষাতের সুন্দর ব্যবস্থা রাখা, বন্দিদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নেবেন তিনি। রান্নার কাজে নিয়োজিত বন্দিদের জন্য কারাগারে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অত্যন্ত চৌকস এবং সৎ কর্মকর্তা হিসেবে ইতোমধ্যে বন্দিদের মধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন গোলাপগঞ্জে জন্ম নেওয়া কারা কর্মকর্তা নাশির আহমেদ। এজন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে তার বদলির আদেশের খবর পেয়ে ওই কারাগারের বন্দিরা অনেকে মনোকষ্টে রয়েছেন। তিনি ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে সুনাম ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্বিক পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটাতে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কারা অধিদপ্তর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলি করেছে।
কারাগারে চলমান দাবদাহ পরিস্থিতিতে বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, চলমান তীব্র দাবদাহের কারণে বন্দিদের মধ্যে সুপেয় পানির পাশাপাশি খাবার স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত ফ্যান লাগানো হয়েছে। অতিরিক্ত চিকিৎসক আনা হয়েছে কারাগারে। চিকিৎসকদের দিয়ে প্রতিদিন একাধিকবার বন্দিদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা তীব্র গরমে বন্দিরা কিভাবে নিয়মিত প্রাত্যহিক কাজকর্ম করবেন, সে সম্পর্কে বলছেন। এ ছাড়া আমরাও কারাগারে বন্দিদের ওপর নজর রাখছি। কোনো বন্দি অসুস্থ হলে দ্রম্নত তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া গরমের কারণে রান্না থেকে শুরু করে কারাগারের প্রতিটি কাজের সঙ্গে যেসব বন্দি জড়িত, তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মানবিক আদেশের বলে বন্দিদের লক আপ টাইমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে সাধারণত বিকাল সাড়ে ৫টার মধ্যে বন্দিদের যার যার সেলে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক ছিল। বর্তমানে তীব্র দাবদাহের কারণে তা খানিকটা শিথিল করা হয়েছে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত বন্দিদের কারাগারের ভেতরে খোলামেলা জায়গায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।