হাজারে ৪০ টাকা কমিশনে প্রতারণা করতেন তারা

উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৮

প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গ্রেপ্তার প্রতারক চক্রের ৮ সদস্য -যাযাদি
শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাতে জড়িত মূলহোতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্সর্ যাব। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়গঞ্জ, জামালপুর, কুমিলস্না ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করেনর্ যাব সদস্যরা। গ্রেপ্তার আটজন হলেন- মূলহোতা জাকির হোসেন হাওলাদার, অন্যতম মূলহোতা বাপ্পি মোলস্না, মো. উসমান গণি মোলস্না, শামীম হোসেন, মোহাম্মদ জিহাদ, কাজী সাদ্দাম হোসেন ওরফে আমির হামজা, আহাদ গাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে জয়। র্ যাব বলছে, সারাদেশে ২ হাজারের বেশি চক্রের সক্রিয় এজেন্ট বা সদস্য রয়েছে। এক রকম শেয়ারবাজারের মতো দর কষাকষি করে তাদের হাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমিশনে প্রতারণার কাজ দেওয়া হয়। এজেন্ট হতে হলে দিতে হয় অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা। চক্রটির সঙ্গে জড়িত একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমকার্ড বিক্রেতারাও। তারা অন্যের নামে সিম রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম বা বিক্রি করা সিম সংগ্রহ করে প্রতারণামূলক কাজে ব্যবহারে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলে। বিভিন্ন সাধারণ মানুষের সংগৃহীত এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় সংগ্রহ করে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে আসছে। প্রতারণার টাকা মূলচক্রের সদস্যের মধ্যে বণ্টন করা হয়। কমিশন ও কাজের খরচা বাবদ এজেন্টদের দেওয়া হয় নির্ধারিত টাকা। সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানর্ যাব-৫-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস। অধিনায়ক বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক শ্রেণির প্রতারকচক্র বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। একটি ঘটনা উলেস্নখ করের্ যাব-৫-এর সিও বলেন, গত ২৪ মার্চ রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন শালবাগান রাজশাহীর বিএনসিসি অফিসে অবস্থানকালে এক ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট্যাট শাখায় কর্মরত মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দিয়ে তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ পস্নাস পাওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তির ২২ হাজার ৫০০ টাকা এসেছে বলে জানায়। ওই টাকা বাদীর অ্যাকাউন্টে চলে যাবে মর্মে একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ডের ষোলো ডিজিটের নম্বর দিতে বললে তিনি তার ষোলো ডিজিটের নম্বর প্রদান করেন। এরপর ওটিপি যাবে বলে জানায়। পরে বাদী মোবাইল ম্যাসেজ অপশনে দেখতে পায়, বাদীর অ্যাকাউন্ট থেকে চারবারে এক লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা হাওয়া। ওই ঘটনায় তিনি বাদী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা জড়িতদের গ্রেপ্তারের্ যাব-৫ অধিযাচনপত্র প্রদান করলের্ যাব-৫ রাজশাহী জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়র্ যাব-৫-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিক্ষা উপবৃত্তি টাকা দেওয়ার নাম করে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িত শামীম হোসেনকে রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম জানায়, সে শুধু মাঠ লেভেলে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে প্রেরণ করত। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতের্ যাব ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। বিভিন্ন কোম্পানির সিম কার্ডসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করে। এরপর একে একে মূলহোতা জাকিরসহ বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৩টি মোবাইল সেট, ৩১০টি সিম কার্ড, নগদ-৩ লাখ ১২৭০ টাকা ও ৯টি ব্যাংক লেনদেনের স্স্নিপ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত প্রত্যেকটি সিমকার্ডে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এলাকায় পরিচিতি ওয়েলকাম ও হ্যালো গ্রম্নপের সদস্য হিসেবে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সরকারি অফিস থেকে শিক্ষা উপবৃত্তি টাকা দেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা ওয়েলকাম বা হ্যালো গ্রম্নপের কলিং সেন্টারে শেয়ার করে?এরপর মূলহোতা জাকির হোসেনের দুই ছেলে মানিক ও হীরা ফোন দিয়ে নম্বর নেয়। কথা বলে বিশ্বস্ততা অর্জন করে ওটিপি নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে। সারাদেশে এজেন্ট ২ হাজার এক প্রশ্নের জবাবের্ যাব-৫-এর অধিনায়ক বলেন, সারাদেশে ওয়েলকাম বা হ্যালো গ্রম্নপের রয়েছে ২ হাজারের বেশি এজেন্ট। এজেন্ট হতে হলে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এন্ট্রি করতে হয়। এরপর মোবাইলে তাদের নামে একটা অ্যাকাউন্ট হয়। ইতোমধ্যে তদন্তে ১৮৬১টি মোবাইল নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে, যেগুলোতে টাকা লেনদেন ও যোগাযোগ হয়েছে।? হাজারে এজেন্ট কমিশন পায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা হাজারে ৩০ বা ৪০ টাকা কমিশন পাওয়ার চুক্তিতে প্রতারণার কাজে এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। এজেন্টের এন্ট্রিকৃত মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ড থাকে মূল চক্রের হাতে। টাকা যাওয়া মাত্র তারা তুলে নেয়। শহরের দূরে অবস্থান করে চক্রের সদস্যরা তাছাড়া তারা এক জায়গায় বেশিদিন থাকেন না। মূল শহর থেকে ১৫ বা ১৬ কিমি দূরে অবস্থান করে। টাকা যাওয়ামাত্র নিকটস্থ কোনো এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করে। তারা নিজেরা অন্য কোনো যানবাহনে চলাচল না করে মোটর সাইকেলে চলাচল করেন। বাড়িতেও থাকেন না। থাকেন নির্জনে। বংশ পরম্পরায় অনেকে জড়িয়েছে প্রতারণায় এই প্রতারণাকে তারা ব্যবসা হিসেবে দেখেন খারাপ কিছু ভাবেন না। তারা শুধু নিজেরা নন পারিবারিকভাবে ব্যবসায় তারা জড়িয়েছেন। প্রতারক চক্রে বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয়স্বজনও প্রভাবিত হয়ে অনেকে এই অভিনব প্রতারণা কাজে জড়িয়ে পড়েছেন তথ্য পেয়েছি। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির বলেন, খোকন মোলস্না এই প্রতারণায় জড়িত। অভিযানের সংবাদে পলাতক খোকন মোলস্নার ছেলে বাপ্পি মোলস্নাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আমরা জানতে পেরেছি, খোকন মোলস্নার মোবাইলে একদিনে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা এসেছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে মূলহোতা জাকির হোসেন হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইলে দেখা গেছে, দুই লাখেরও বেশি টাকা আদান-প্রদান করা হয়েছে। শেয়ারবাজারের মতো দর কষাকষি করে প্রতারণার কাজ বণ্টন চক্রের যারা সদস্য রয়েছে তাদের মধ্যে দর কষাকষি হয়। শেয়ার বাজারের লেনদেনের মতো দর ওঠানামা করে। কে কত টাকায় এই প্রতারণামূলক কাজটি করবে। কেউ হাজার টাকায় ৪০ টাকা কেউ হাজার টাকায় ৩০ টাকা কমিশন পেতে কাজটি নেয়।?তাদের মধ্যে যারা পারদর্শী ও বিশ্বস্ত তাদের কাজটি দেওয়া হয়। অর্থ আত্মসাতের কাজটি সম্পন্ন হওয়ার পর সেই এজেন্ট নিজের প্রাপ্ত অংশ রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেয়। এরপর প্রচার চক্রের মূলহোতা বাকি টাকা বণ্টন করে দেন। প্রতারণায় ব্যবহার অন্যের সিম চক্রটির সঙ্গে জড়িত একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিম কার্ড বিক্রেতারাও। তারা অন্যের নামে সিম রেজিস্ট্রেশনকৃত সিম বা বিক্রি করা সিম সংগ্রহ করে প্রতারণামূলক কাজে ব্যবহারে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খোলে। একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিম বিক্রেতা গ্রেপ্তার আহাদ গাজী। কোম্পানি থেকে টার্গেট থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ সিম বিক্রি করতে হবে বিক্রি করতে না পারলে তাকে চাপে থাকতে হয়। এজন্য বিভিন্ন লোক আসলেই তারা ৫০ থেকে ১০০ টাকা সিম বিক্রি করেন। যদিও এই সিম ফ্রিতে দেওয়ার কথা। বিভিন্ন সাধারণ মানুষের সংগৃহীত এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে সিম বিক্রি। কেউ ফেরত দিলে সেটি পুনরায় বিক্রি করে এই প্রতারক চক্রের কাছে। ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় এসব সিম সংগ্রহ করে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে আসছে প্রতারক চক্রটি।