চলতি মাসে দেশে বিদু্যতের চাহিদা বেড়ে সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে বলে জানিয়েছিল বিদু্যৎ বিভাগ। কিন্তু যে হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এপ্রিলেই চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সক্ষমতা থাকলেও এই পরিমাণ বিদু্যৎ উৎপাদন নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। সে ক্ষেত্রে দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে গোটা দেশ। আর অসহনীয় এই গরম থেকে বাঁচতে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন এসি কিনতে। ফলে গ্রীষ্মে স্বাভাবিক বিক্রির তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে এসি বিক্রি। পরিস্থিতি এমন যে রাজধানীতে নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের এসি স্টক আউট। ফলে রাতারাতি বিদু্যতের চাহিদা বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের উৎপাদন বিভাগের কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে বলেন, 'বর্তমানে দেশের পাওয়ার জেনারেশন, বিপণন ও প্রাথমিক জ্বালানি প্রাপ্যতা যে অবস্থায় রয়েছে তাতে এই পরিমাণ বিদু্যৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ানো সময় সাপেক্ষ, ফলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।'
বিপিডিবি সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি সংকট ছাড়াও বন্ধ থাকা বেসরকারি বিদু্যৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নূ্যনতম বকেয়া পরিশোধ করে পুনরায় চালু করা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এছাড়াও এসব কেন্দ্র চালুর জন্য জ্বালানি জোগান ও তার অর্থ প্রাপ্তি সময় সাপেক্ষ। অন্যদিকে ট্রান্সমিশন দুর্বলতায় কারণে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ ঘাটতি হচ্ছে। কারিগরি জটিলতায় বন্ধ রয়েছে সরকারি বেশকিছু বিদু্যৎ কেন্দ্রও। তাই রাতারাতি এই পরিমাণ বিদু্যৎ ঘাটতি পূরণের সুযোগ কম।
এদিকে ২১ এপ্রিল দেশে বিদু্যতের চাহিদা ছিল প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট, ধারণা করা হচ্ছে এ সপ্তাহের মধ্যে চাহিদা ১৭ হাজার এবং মে মাসে আরও ১ থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট বাড়বে। কিন্তু এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো। বিপিডিবি বলছে, এই মুহূর্তে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে। যার মধ্যে গ্যাস ভিত্তিক ৮ হাজার মেগাওয়াট, ৩৫০০ মেগাওয়াট কয়লা, ১৪৫০ আমদানি ও নবায়নযোগ্য উৎসসহ সর্বমোট ১৫ হাজার মেগাওয়াট।
যদিও দেশে বর্তমান বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। যার বড় একটি অংশ বেসারকারি খাতের অধীনে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় এবং দ্বিগুণ উৎপাদন ব্যয়ের কারণে বিশেষ করে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে বিগত কয়েক বছর ধরেই।
এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিদু্যৎ উৎপাদন কোম্পানি, ভারত থেকে বিদু্যৎ আমদানি বাবদ গত জানুয়ারি শেষে অপরিশোধিত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। তাই এই মুহূর্তে নিয়মিত বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি চড়া দামে জ্বালানি তেল কিনে এসব কেন্দ্র ফের চালু করা হলে সরকারের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। তবে বিকল্প হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদু্যৎ আমদানি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে গরমে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট ভর্তুকির প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা গত মার্চ থেকে পরবর্তী চার মাসে পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছিল বিদু্যৎ বিভাগ। মার্চের মধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে ভর্তুকির অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় করার অনুরোধ ছিল। কিন্তু সরকারের কোষাগারে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় গত ২৮ মার্চ ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পর এ খাতে আর কোনো অর্থ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে দেশে তীব্র গ্যাস সংকট সত্ত্বেও গত মাসের তুলনায় বিদু্যৎ খাতে সরবরাহ দ্বিগুণ করা হয়েছে। যেখানে ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চে গ্যাসে সক্ষমতার ৩ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হতো। কয়লার নতুন কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না এলে বিদ্যমান সক্ষমতার শতভাগ উৎপাদনে রয়েছে। তবে জটিলতা রয়েছে তরল জ্বালানি নির্ভর বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলোর। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারিগরি সমস্যা ও এর বাড়তি ব্যয় এবং জ্বালানির অর্থের জোগান না থাকায় উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।