মুক্তিপণ দিয়ে সোমালিয়া জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
রোববার বিকাল ৪টা নাগাদ ফুজাইরা উপকূল এবং হরমুজ প্রণালি হয়ে আমিরাতের বহির্নোঙরে পৌঁছে। কেএসআরমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোববার বিকালে আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছানোর পরের দিন সোমবার কয়লা খালাসের জন্য জাহাজটিকে জেটিতে ভিড়ানো হবে। জাহাজটি ভেড়ার পর আল হামরিয়া বন্দরে চার থেকে পাঁচ দিন অবস্থান করবে। তবে সংশ্লিষ্ট বন্দরের বার্থিং সিডিউল অনুযায়ী, জাহাজজট কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে বার্থিংয়ে ২৪-৩২ ঘণ্টা দেরি হতে পারে।
এদিকে জাহাজ থেকে দুইজন নাবিক বিমানে করে দেশে ফিরবেন। বাকি ২১ জন নাবিক এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজযোগে দেশে ফিরবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের সময় লাগবে ২৫-২৬ দিন। নাবিকদের নিজ নিজ ইচ্ছায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নাবিকরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুলস্নাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উলস্নাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
মেহেরুল করিম আরও বলেন, দীর্ঘ ৩১ দিন জিম্মি থাকার পর গত ১৩ এপ্রিল শনিবার জাহাজটি মুক্তি পায়। এরপর সোমালিয়ার ডেরা থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। জাহাজটি শনিবার সন্ধ্যার পর দেশটির জলসীমায় প্রবেশ করে। জাহাজটি ঘণ্টায় ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার গতিতে রোববার বিকালে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে।
ভিডিও বার্তায় জাহাজের মাস্টার আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, জাহাজটিতে ৩১ দিন ধরে থেকে অনেকটা নোংরা করে ফেলেছে জলদসু্যরা। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে জাহাজের অবস্থা এমন করেছে যে, জাহাজের ভেতরের চেহারাই পাল্টে গেছে। এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকরা সেই জাহাজ চলন্ত অবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন।
তিনি জানান, নাবিকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। জাহাজটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাত্রা সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল, পানি ও খাদ্য মজুত ছিল। দেশে নিরাপদে পৌঁছার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার দসু্যরা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজটি জিম্মি করে। দেশটির উপকূল থেকে ৫৭৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দসু্যরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপর শুরু হয় দর-কষাকষি।
পরে ৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময় ৩১ দিন পর, অর্থাৎ ৩২ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ এপ্রিল শনিবার রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার পরই এক হাজার ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকা আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। জাহাজটিতে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে।
এ সময় জাহাজটিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ ও তিনটি টহল জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ জলসীমা পার করে দেয়। এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবলে পড়ে কেএসআরএম গ্রম্নপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি।
ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে এবার মাত্র ৩২ দিনেই এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজটিকে সোমালিয়ান জলদসু্যদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
কেএসআরএমের তথ্য মতে, এস আর শিপিংয়ের অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয় এমভি আবদুলস্নাহ। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এস আর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম রাখা হয় এমভি আবদুলস্নাহ।