ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন
বিক্ষুব্ধদের হামলায় দুইজন নিহত
প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফরিদপুর ও মধুখালী প্রতিনিধি
একটি মন্দিরে আগুনের ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও পিটুনিতে পাশের একটি স্কুলের নির্মাণকাজে থাকা দুই শ্রমিকের মৃতু্য হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরও পাঁচ শ্রমিক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলার প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ রাখা হতাহতদের উদ্ধার করে
হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হামলায় নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন- মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, হিন্দু অধু্যষিত পঞ্চপলস্নী গ্রামের ওই বারোয়ারি মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপলস্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ বস্নক নির্মাণকাজে নিয়োজিত মুসলিম সাত শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে গণ-ধোলাই দেয়।
খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েক ঘণ্টা পর অবরুদ্ধদের উদ্ধার করা হয়।। তিনি জানান, আহত অবস্থায় সাত শ্রমিককে উদ্ধার করা হলেও তাদের মধ্যে চারজন অচেতন ছিলেন। আহতদের উদ্ধার করে দুইজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে এবং ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. মোরশেদ আলম জানান, শত শত মানুষ এই হামলায় অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
আহত শ্রমিক লিটন মোলস্না জানান, আগুন দেখার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে আমরাও নেভানোর কাজে অংশ নেই। কিন্তু বিক্ষুব্ধরা শ্রমিকদের সন্দেহ করে হাত-পা বেঁধে গণপিটুনি দেয়। বিক্ষুব্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষ লাঠি রড-ইট দিয়ে হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে তাদরে। এসময় স্কুলটির দরজা-জানালা ভাঙচুর করে তারা।
এদিকে ডুমাইন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি তিন পস্নাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন বলেন, 'মাগরিবের নামাজ পড়ে আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পর এই ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন দেন। বললেন, আপনি দ্রম্নত আসেন, এখানে মন্দিরে আগুন দিছে। কে বা কারা? বললেন, এখানে লেবাররা আগুন দিছে। তাদের ধরে রাখছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসলাম। এসে দেখি হাজার হাজার জনতা। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম যে পরিস্থিতি বেগতিক। এখানে আসলে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।'
চেয়ারম্যান বলেন, আমি সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দিই, ইউএনওকে ফোন দেই। পরে প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।