প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী
'মর্যাদা-সৌন্দর্য' যখন শিংয়ে
ভারতের কর্ণাটকের হালিস্নকার জাতের দু'টি গরু। এই গরুর শিং দেড় ফুটের মতো লম্বা। শিং দেখতে অনেকটাই সাদা। দু'টি গরুর ওজন প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি
প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজন করা হয় দুই দিনব্যাপী পশু-পাখির মেলা। বৃহস্পতিবার মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কাউন্সিল।
শুক্রবার সরেজমিন মেলায় দেখা গেছে, পশু-পাখিদের একটি প্যাভিলিয়নের নাম 'ষাঁড়'। সেখানে কী থাকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্যাভিলিয়নের কর্মীরা জানান, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, রেড চিটাগাং, হালিস্নকার, কঙ্করাজসহ নানা জাতের ষাঁড় নিয়ে এসেছেন তারা। অবশ্য ষাঁড়ের পাশাপাশি আলবিনোসহ নানা জাতের মহিষও ছিল। সাধারণ মহিষ দেখতে কালো হলেও আলবিনোর রং সাদা।
'ষাঁড়' প্যাভিলিয়নে ছিল ভারতের কর্ণাটকের হালিস্নকার জাতের দু'টি গরু। এই গরুর শিং দেড় ফুটের মতো লম্বা। শিং দেখতে অনেকটাই সাদা। দু'টি গরুর ওজন প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি। একেকটির দাম চাওয়া হচ্ছিল সাড়ে ১২ লাখ টাকা।
'প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪' উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত এই মেলায় হালিস্নকার জাতের গরু দু'টি নিয়ে এসেছে ঢাকার রায়সাহেব বাজারের হাইদার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো। এর কর্ণধার সাদমান হায়দার বলেন, এই গরু মাংসের জন্য নয়, মানুষ শখের জন্য কেনে। এই গরুর মর্যাদা বা সৌন্দর্যই হলো তাদের শিং। তিনি বলেন, হালিস্নকার জাতের গরু দেশে সাধারণত দেখা যায় না। গত ডিসেম্বরে চুয়াডাঙ্গা থেকে তারা গরু দু'টি সংগ্রহ করেছেন।
এই প্যাভিলিয়নের পাশেই গাভি ও বাছুরের প্যাভিলিয়ন। তার পাশে ছাগল, ভেড়া ও ভুট্টির প্যাভিলিয়ন। ভুট্টি হলো খর্বাকৃতির গরু। এই জাতের গরু আকারে যত ছোট হয় এবং বয়স যত বেশি হয়, তার 'মর্যাদা' ও দাম তত বেশি।
'বক্সার' ও 'ব্রাউন' জাতের দু'টি ভুট্টি নিয়ে এসেছেন খামারি মো. রাফি। তিনি বলেন, তার প্যাভিলিয়নে ২৯ ইঞ্চি উচ্চতার বক্সার ভুট্টি রয়েছে। এর দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা। ব্রাউন ভুট্টির উচ্চতা ৩০ ইঞ্চির বেশি, দাম দুই লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মেলায় প্যাভিলিয়ন ছিল সাতটি। এর বাইরে স্টল ছিল শতাধিক। মেলায় কয়েকশ' প্রজাতির তিন হাজারের বেশি পশু-পাখি প্রদর্শনীর জন্য আনা হয়েছিল।
হালিস্নকারের মতো কঙ্করাজ জাতের গরুরও বড় শিং। এ ধরনের গরুও মেলায় এসেছে। এর বাইরে বিভিন্ন জাতের গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা, মহিষ, ঘোড়া, মুরগি, বিড়াল, কুকুর ও পাখি রয়েছে মেলায়। প্রতিটি প্রাণীর বেশ কয়েটি জাত আনা হয়েছে এখানে।
মেলার প্রবেশ পথের বাঁ পাশে পোষা প্রাণীর প্যাভিলিয়ন। সেখানে রয়েছে উট ও ঘোড়া। এর মধ্যে থরোব্রেড, সিন্ধু ও মারওয়ারি জাতের তিনটি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের খামারি মো. আসিফ জাফর। তার খামারের নাম 'আস্তাবল'। তিনি বলেন, তার কাছে তিন থেকে সাত লাখ টাকা দামের ঘোড়া রয়েছে।
পোষা প্রাণীর প্যাভিলিয়নে রয়েছে নানা জাতের বিড়াল, কুকুর, কবুতর, মোরগ-মুরগি ও পাখি। এর মধ্যে আড়াই লাখ টাকা
দামের ম্যাকাও পাখিও রয়েছে।
মেলার প্রথম দিনই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। তারা কেউ ছবি তুলেছেন পশু-পাখির সঙ্গে, কেউ পশুর গায়ে হাত বুলিয়েছেন। আগারগাঁও থেকে দুই বোন তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। তাদের একজন রাবেয়া বেগম বলেন, 'বাচ্চারা পশুপাখি দেখবে, তাই এসেছি।'
প্রাণিসম্পদের প্রদর্শনী ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও আয়োজকদের স্টলও ছিল মেলায়। দর্শনার্থীদের জন্য প্রাণিসম্পদ-বিষয়ক নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়ারও ব্যবস্থা ছিল মেলার বিভিন্ন স্টলে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে পশু-পাখির উন্নত জাত তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ মেলায় এসে গবাদিপশুর উন্নত জাত সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছেন। এসব দেখে ও জেনে অনেকে হয়তো খামার করার বিষয়ে আগ্রহী হবেন।