বিপদমুক্ত এমভি আবদুলস্নাহ মেরিটাইম খাতে স্বস্তি

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সোমালিয়ার জলদসু্যদের হাতে জিম্মি থাকা 'এমভি আবদুলস্নাহ' বিপদমুক্ত হওয়ায় মেরিটাইম খাতে স্বস্তি নেমে এসেছে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজটির মালিকপক্ষকে বাহবা দিচ্ছেন শিপিং সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজের নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার যে প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি তা প্রশংসার দাবি রাখে। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ অভিযান পরিচালনা করলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। এক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেভাবে নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করা হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ রুটে জাহাজ চালাতে হলে আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে- এটাই হচ্ছে এ ঘটনার ম্যাসেজ। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, জাহাজটির মালিকপক্ষ নিরাপদে নাবিকসহ জাহাজটি জলদসু্যর কবল থেকে মুক্ত করতে ধৈর্য ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারও সার্বিক সহযোগিতা করেছে। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষ জানিয়েছে, ১৪ বছর আগে তাদের জাহাজ 'জাহান মণি' উদ্ধারে বেশি সময় লেগেছিল। কারণ তখন অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের অভাব ছিল। এবার আগের অভিজ্ঞতার আলোকে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজটি জলদসু্যদের কাছ থেকে মুক্ত করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি, জিম্মি থাকাবস্থায় এমভি আবদুলস্নাহর আশপাশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক যুদ্ধজাহাজ নজরদারি করছিল। আবার স্থলভাগে পুলিশও জলদসু্যবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। এতে জলদসু্যদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল হয়তো। সে যাই হোক, আমাদের জন্য আনন্দের খবর হলো- বিপদমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুলস্নাহ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে সন্দিগ্ধ এলাকায় জাহাজ চালানোর সময় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। যদিও জলদসু্যরা হিংস্র এবং অভিজ্ঞ। এক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে ভারী অস্ত্রসহ পেশাদার আর্ম গার্ড নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জাতিসংঘ রিস্কি এলাকাগুলোতে টহল বাড়াতে পারে। এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম'র সিইও মেহেরুল করিম বলেন, এমভি আবদুলস্নাহ সোমালিয়ায় জলদসু্যর কবলে পড়া একটি দুর্ঘটনা। পজিটিভ দিক হচ্ছে, আমরা দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১২টায় 'এমভি আবদুলস্নাহ' জাহাজটি হাইরিস্ক এরিয়া পেরিয়েছে। ১২ নটিক্যাল মাইল স্পিডে জাহাজটি চলছে। ২২ এপ্রিল জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। এরপর নাবিকরা ওই জাহাজেই কিংবা ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন। এ পর্যন্ত দু'জন নাবিক ফ্লাইটে আসার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। বাকিরা ওই জাহাজেই দেশে ফিরবেন ইনশাআলস্নাহ। ওই জাহাজে নাবিকরা দেশে ফিরতে কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখান থেকে ভাড়া নিয়েই জাহাজটি দেশে আসবে। সব মিলে ২৬ থেকে ২৭ দিন সময় লাগতে পারে। গত রোববার (১৪ এপ্রিল) কেএসআরএম গ্রম্নপের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমাদের জাহাজ হাইরিস্ক এরিয়ার বাইরে ছিল। ২০০ নটিক্যাল মাইল রিস্কি। আমরা ৬০০ নটিক্যাল মাইলে ছিলাম। তাই তখন আর্ম গার্ড নিইনি আমরা। গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দসু্যরা ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুলস্নাহ জাহাজটি জিম্মি করেছিল। মুক্ত হওয়ার সময় ওই জাহাজ থেকে নেমে যায় ৬৫ জন জলদসু্য।