রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আ'লীগ ইতিহাস দখল করার চেষ্টা করছে :আমীর খসরু

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আ স ম আব্দুর রব। পাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (ডানে) -যাযাদি

আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, 'আজকে যারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা ইতিহাস দখল করার চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা আজকে ইতিহাসবিদ হয়ে গিয়েছে। ইতিহাসবিদ হওয়ার মধ্যে আজকে যারা ক্ষমতায় আছে- তারা সবচেয়ে বড় ইতিহাসবিদ। তাদের ইতিহাসকে প্রমাণ করার জন্য আবার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা আছে। এমনকি বিচার বিভাগকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।'

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের' পটভূমিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে ১০ এপ্রিলকে 'প্রজাতন্ত্র দিবস' ঘোষণার দাবিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'রাজনীতিবিদ যখন ইতিহাসবিদ হয়ে যায়- তখন সেটা আর ইতিহাস থাকে না, সেটা হয়ে যায় প্রোপাগান্ডা। সেই প্রোপাগান্ডাকে ইতিহাসে পরিণত করার জন্য আমাদেরকে ইতিহাসে রিভিজিট করতে হবে। সেটা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই।'

নৌকা নিয়ে সরকারের এখন মানুষের কাছে যাবার সাহস নেই মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, 'সরকার উপজেলা নির্বাচন করতে যাচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ) চিন্তা করছে বাংলাদেশের মানুষ তো নৌকাকে ভয় পায়, তাই নৌকার কথা শুনলে ভোট কেন্দ্রে যাবে না। তাই এবার নৌকা বাদ দিয়েছে। মানে তাদের নৌকা নিয়ে এখন মানুষের কাছে যাওয়ারও সাহস নাই। নৌকাকে কিন্তু এখন তারা বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই কিন্তু আইন করেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মার্কা দিয়ে ভোট করার জন্য। তারা সে আইন বাতিল করে নাই, আইন রেখেছে। এই আইন রেখেই কিন্তু তারা নৌকা নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে না। কারণ ওরা (আওয়ামী লীগ) দেখছে- নৌকা যেখানে আছে, সেখানে তারা (জনগণ) নাই।'

আমির খসরু বলেন, 'জনগণ নৌকাকে বয়কট করেছে। তারা এখন নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে যে, এখন তো নৌকা নাই, আপনারা আসতে পারেন। তারা আরেকটি ভাওতাবাজির নির্বাচন করতে যাচ্ছে।'

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, 'যেই দেশে অন্যায়-জুলুমের প্রতিবাদ করতে পারব না, সেই দেশে থাকবও না। জন্মগ্রহণ করেছি মানুষের জন্য কথা বলার জন্য। এখন মানুষের জন্য যদি কথা বলতে না পারি, তাহলে আমার জন্মগ্রহণ বৃথা। ২০৪১ সাল পর্যন্ত নাকি এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে। এদের নাকি মৃতু্য নাই।' এসময় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কেবল ঘরে মধ্যেই বসে থাকেন। বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী আজকে পা চাটতেই পছন্দ করছেন। কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ মনে করছেন টিকে থাকার জন্য এটাই করা দরকার। সামগ্রিকভাবে সমাজের মধ্যে এই যে নৈতিকতার অবক্ষয় শুরু হয়েছে- এখান থেকে বাঁচাতে পারে কেবল মাত্র রাজনীতি। আমি মনে করি, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে আমাদের গঠনমূলকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এখন যত দেরি হবে তত আমাদের ক্ষতি হবে।'

জেএসডি'র সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।

কাদের সাহেব অবান্তর কথা বলেন

এদিকে বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশি অবান্তর কথা বলেন, তিনি আরও বলেন, 'ওবায়দুল কাদের বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার যে তালিকা চেয়েছেন, তা সরকারের কাছেই আছে।'

বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ১২ বছর পূরণ হওয়া উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'বিনা ভোটের সরকার অসংখ্য মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করেছে। জাতিসংঘ গুমের একটি তালিকা দিয়েছিল। সরকার এর কোনো জবাব দিতে পারেনি।'

তিনি বলেন, 'গণমাধ্যমে দেখেছি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপির কাছে তালিকা চেয়ে তারস্বরে চিৎকার করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব কিসের তালিকা চাইছেন? এর আগেও তো তালিকা দেওয়া হয়েছিল। আর তালিকা তো আপনাদের [সরকার] কাছেই রয়েছে। আইন, আদালত, থানা-পুলিশ তো আপনাদের কব্জায়।'

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, 'ওবায়দুল কাদের সাহেবের স্নায়ু শিথিল, মস্তিষ্ক অলস ও হৃদয় দুর্বল হওয়ার কারণে বেশি বেশি অবান্তর কথা বলেন।'

'সরকারই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে' দাবি করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, 'সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম, টিপাইমুখ বাঁধ এবং সীমান্ত আগ্রাসনের প্রতিবাদে সিলেট অঞ্চলে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ইলিয়াস আলী রাষ্ট্রযন্ত্র ও দেশি-বিদেশি অপশক্তির গাত্রদাহের প্রধান কারণ ছিলেন। সমাজে মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির জন্যই গুমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে