গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের নেই সঠিক পরিসংখ্যান
'গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সঠিক কোনো ডাটাবেজ নেই। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে নতুন করে বিস্ফোরণের ডাটাবেজ তৈরি করতে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যাতে করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা সম্ভব হয়'
প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
গাফফার খান চৌধুরী
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। যে কারণে প্রতিবছর বা মাসে বা দিনে কতগুলো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, এর প্রকৃত কোনো তথ্য নেই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কাছেও। এতে বিস্ফোরণে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যাও অজানাই থেকে যাচ্ছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের প্রকৃত সংখ্যা, হতাহত ও দগ্ধদের তথ্য সংরক্ষণ করতে বিশেষ ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ডাটাবেজ তৈরিতে সহায়তা করার অনুরোধ করা হয়েছে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর ভাষ্য মতে, সচেতনতার অভাবেই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ায় স্বাভাবিক কারণেই বেড়েছে হতাহত ও পঙ্গুত্বের হার। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে ৩০টি গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানিকে ঈদের আগেই কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারী কোম্পানির লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে খোদ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ও পঙ্গুত্বের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, 'সত্যিকার অর্থে সারাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নেই কোনো ডাটাবেজ। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে নতুন করে বিস্ফোরণের ডাটাবেজ তৈরি করতে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তদন্তকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যাতে করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা সম্ভব হয়। যা ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কাজে আসবে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। যাতে বিস্ফোরণের প্রকৃত তথ্য থাকবে। এতে করে কি কি কারণে বা কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বা কীভাবে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটেছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। যা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে আমি আশাবাদী'।
তিনি আরও জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রাহক ও বিক্রেতা পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদনকারী ৩০টি কোম্পানিকেও সর্তক করা হয়েছে। যাতে করে কোম্পানিগুলো উন্নতমানের সিলিন্ডার তৈরি করে। এ জন্য ঈদের আগে দেশের সব গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানিকে কঠোর নির্দেশনা সংবলিত চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অবশ্যই নিয়ম মেনে গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণসহ ব্যবসা করতে হবে। নির্দেশনা অমান্যকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। খোদ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেই তাগাদা এসেছে এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য।
যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেছেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের অনেক ঘটনারই তদন্ত করে দেখা হয়েছে এবং হচ্ছে। তদন্তে দেখা গেছে, অধিকাংশ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে পাইপের লিকেজ থেকে। এ ছাড়া রেগুলেটরের প্রসঙ্গও এসেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। কোনো গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর খারাপ থাকলে এবং তা তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো গ্রাহক যদি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম না জানেন, তাহলে গ্রাহক যেন সেটি বিক্রেতাকে বলেন। এ ব্যাপারে কোম্পানিগুলোকে তাদের ডিলারদের যেন প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যাতে করে বিক্রেতা গ্রাহককে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম বলে দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, নিয়মানুযায়ী মাঝে-মধ্যেই গ্যাসের পাইপ চেক করা প্রয়োজন গ্রাহক ও বিক্রেতাদের। এ ছাড়া কোম্পানির উচিত, সিলিন্ডার চেক করা। কিন্তু কেউই তা যথাযথভাবে পালন করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ও পঙ্গুত্ববরণের মতো ঘটনা ঘটছে। মূলত সচেনতার অভাবেই প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া কোনো কোনো কোম্পানির নিম্নমানের সিলিন্ডার ও সঠিক সময় সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই গ্যাস ভরে বাজারে বিক্রি করার কারণেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য মতে, বছরে গড়ে ৫-৬টি বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়াও ছোটখাটো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। গ্যাস সিলিন্ডার যথাযথভাবে পরিবহণ, মজুত ও ব্যবহার না করা এবং ত্রম্নটিপূর্ণ গ্যাস ভালভের কারণেও গ্যাস বেরিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এ জন্য অবশ্যই গ্যাস সিলিন্ডার, রেগুলেটর, কোম্পানির সিল, সেফটি ক্যাপ, পাইপ ও রাবারের রিং অনুমোদিত বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে হবে। সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তা পরীক্ষা করতে হবে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর গড়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৬০ জনের মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে। নিহতদের ৮৫ শতাংশই নারী ও শিশু। অধিকাংশ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে রান্না ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বা গ্যাসের চুলা থেকে। আর বিস্ফোরণে দগ্ধ হন বছরে গড়ে অন্তত ৫০০ জন। যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ জন চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন।