আহত দেড় শতাধিক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক সংঘর্ষে নিহত ১

প্রকাশ | ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ১৫১ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাত দাঙ্গাবাজকে গ্রেপ্তার করেছে। শিশুদের গোসল করা নিয়ে, সরকারি জায়গা থেকে ধান কাটা, জমিতে সেচের পানি দেয়া, হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে বাদি পক্ষের ঘেরাও করা, জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ও ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর, একই উপজেলার শাহাজাদাপুর ও বিশুতারা, নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক, একই উপজেলার হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৬ চাতলপাড় ইউনিয়নের গুজিয়াখাই ও বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের কামালমুড়া গ্রামে পৃথক এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম কামাল উদ্দিন (৫৫)। তিনি শাহাজাদাপুর গ্রামের শাহাদাৎ আলীর ছেলে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, পুকুরে গোসল করা নিয়ে দুই শিশুর মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে গত রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর গ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন। সংঘর্ষে আহতরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল, সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয়। এদিকে একটি সরকারি জায়গায় ধান চাষ করা ধান নিয়ে শনিবার দুপুরে সরাইল উপজেলার শাহাজাদুপর গ্রামের রিপন মিয়ার দলের সাথে একই এলাকার কাউছার, মাসুক ও আফজাল মিয়ার দলের বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ উভয়পক্ষ সালিস সভায় বসে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও সভা হয়। উভয়সভায় সিদ্ধান্ত হয় সরকারি ওই জমির ধান দুই পক্ষের কেউ কাটতে পারবেন না এবং এই ধান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে কাটা হবে। উভয়পক্ষ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে সম্মত হয়ে স্বাক্ষর করে যান। ঈদের পরদিন শুক্রবার ভোরে সালিসের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউপি সদস্য জুয়েল, নাজমা বেগম, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুন্না, আজিজ ও ময়েজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই জমির ধান কেটে নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুকিয়ে রাখা ধান উদ্ধার করে জব্দ করে। এরই জেরে শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় কামাল উদ্দিন নামে একজন মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় উভয়পক্ষের ৫৫ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়। অপর দিকে একই দিনে নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের গুজিয়াখাই গ্রামে জমিতে সেচের পানি দেয়াকে কেন্দ্র করে চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার খায়রুল পাঠানের গোষ্ঠীর লোকদের সাথে সাবেক ইউপি সদস্য মারফত আলীর গোষ্ঠীর লোকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চার দাঙ্গাবাজকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক গ্রামে দু'দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা গ্রামে একটি হত্যা মামলার আসামিদের বাড়িতে বাদি পক্ষের ঘেরাওকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ও একজনকে গ্রেপ্তার করে। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, গত ৭ মার্চ বিশুতারা গ্রামের নিজ বাড়ির পাশ থেকে রোকেয়া বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়। রোকেয়া বেগম ওই গ্রামের বড় বাড়ির আবুল কালামের স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মন্নাফ মিয়া বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। ইতিমধ্যেই পুলিশ একাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার বাদী পক্ষের লোকজন আসামি ধরতে প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘেরাও করে। এ নিয়ে দুইপক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে বুধবার সকালে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বিজয়নগর উপজেলার কামালমুড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধাসহ ছয়জন আহত হন।