রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানবপ্রেম-দেশপ্রেমের গান দিয়ে শুরু হবে ছায়ানটের বর্ষবরণ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ছায়ানটে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া। ছবিটি শনিবার তোলা -ফোকাস বাংলা

নববর্ষের প্রথম প্রভাতে দেশ ও মানুষের জয়গানের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র ছায়ানট। পহেলা বৈশাখ ভোরের আলো ফুটতেই রাজধানীর রমনার বটমূলে আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে নতুন বছরকে আবাহন জানানো হবে। ভোগবাদ নয়, স্বার্থপরতা নয়, মনুষ্যত্বকে পাওয়ার অভিলাষেই প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের অনুষ্ঠান।

শনিবার সকালে রাজধানীর লালমাটিয়ায় ছায়ানট কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী, সহ-সভাপতি আতিউর রহমান, সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা এবং যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়।

ছায়ানটের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্ষবরণ সার্থক করতে শতাধিক খুদে ও বড় শিল্পীর আন্তরিক নিষ্ঠায় প্রায় আড়াই মাস আগে থেকেই গান তোলা আর গলা মেলানোর কাজে নেমেছেন। রমনা উদ্যানে দুই ঘণ্টার এই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ১৫০ জনের মতো শিল্পী-কর্মীকে ধারণ করতে পারবে- এমন মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। আয়োজকরা বলেছেন, নতুন বাংলা বছরকে বরণ করার এই আয়োজন সার্থক করে তুলতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর বরাবরের মতোই অক্লান্ত সেবা দিয়ে চলেছে। ছায়ানট কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা, লাউড ওয়ার্কস এবং থার্টিনথ হুসার্স ওপেন রোভার গ্রম্নপের সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, 'বিশ্বব্যাপী বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে কমেছে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, যার ফলে ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, ক্রমান্বয়ে অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্বের ক্রমবৃদ্ধিতে, অন্য মানুষের প্রতি আচরণের অস্বাভাবিকতায় আজ আমরা মুখোমুখি নতুন সংকটের। তবে এই সংকটে আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, বিশ্বাস করি মানুষের কাছে গিয়ে, মানুষের হাতে হাত রেখে সবার সঙ্গে মিলবার, চলবার, গাইবার সাধনাই মানুষকে আবার ফিরিয়ে আনবে মানুষের কাছে।'

এতে আরও বলা হয়, 'স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনায় আমাদের যুক্ত হতে হবে।

মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার শক্তিতে বাঙালি মনুষ্যত্বের জয়গান গাইবে, উচ্চারণ করবে, 'কত শতাব্দী করেছি মা পাপ মানুষেরে করি ঘৃণা, জানি মা মুক্তি পাব না তাহার প্রায়শ্চিত্ত বিনা, পরম প্রত্যয়ে বলবে হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো মনটা করো পরিষ্কার।' মানুষকে ভালোবেসে নিজেকে সার্থক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আঁধার রজনী শেষে নবীন আলোয় নবীন আশায় নবীন জীবন লাভ করে সুদিনের পথে চলব আমরা, বাঙালিকে বলব, নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়।'

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, 'স্বাভাবিকতা এবং পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা' এমন প্রত্যয়ে এবার রমনা বটমূলে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করবে সংগঠনটি। ১৪৩১ বঙ্গাব্দের নতুন প্রভাতে গানে পাঠে থাকবে অন্ধকার থেকে আলোর সন্ধান। প্রায় দেড় শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে সেই প্রভাতী আয়োজনের মহড়া চলছে ছায়ানট ভবনে।

শুধু অচেতন ভাঙার ডাকই নয়, রমনার ছায়াতলে প্রভাতী আয়োজনে ক্রান্তিকাল পেরিয়ে স্বাভাবিক এক প্রত্যয়ের ডাক দিয়ে যাবে ছায়ানট। এতে মিশে থাকবে অসাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি সহনশীলতা আর হিংসা-নিন্দা মুছে ফেলার আহ্বান।

ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, 'স্বাভাবিকতা এবং পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা করতে হবে। আমরা কিন্তু একটা ক্রান্তিকাল পার করেছি। আমরা যেন আবার স্বাভাবিক জীবনের মধ্যে আসতে পারি এবং সেই সঙ্গে সমাজে যে ধরনের অনাচার কিংবা নারীর প্রতি বিদ্বেষ অথবা অসাম্প্রদায়িকতাসহ আমাদের যে বিকারগ্রস্ততা রয়েছে, সেগুলো থেকে বেরিয়ে যেন একটা স্বাভাবিক জীবনের পথে যেন আমরা যাই।'

লিসা বলেন, 'শুরুতে প্রভাতী সুরে বাঁশিতে আমরা একটি বাজনা শুনবো। এরপর রবীন্দ্রনাথের "আঁধার রজনী পোহালো" দিয়ে শুরু হবে আয়োজন।'

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান আমলে ১৯৬১-তে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে রবীন্দ্রবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করে পাকিস্তানে। তখনই ছায়ানটের জন্ম। ছায়ানট সঙ্গীত শিক্ষালয়। ছায়ানট বাঙালি সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনের সংগঠন। ছায়ানট বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের ধারক। ছায়ানট এখন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সঙ্গীতাচার্য ওয়াহিদুল হক ও সঙ্গীতব্যক্তিত্ব সন্‌জীদা খাতুন মিলে ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচারে ছায়ানটের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ছায়ানটের আঁতুড়ঘর থেকে তৈরি হয়েছেন অনেক খ্যাতিমান শিল্পী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে