রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাহাড়ে বাজল বৈসু'র সুর

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
পাহাড়ে বাজল বৈসু'র সুর

পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে পাহাড়ে বাজল ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব 'বৈসু'র সুর। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে গরিয়া নৃত্য, বোতল নৃত্য ও খেলাধুলায় বর্ষবরণের এই উৎসবে মেতেছেন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ।

ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বৈসাবি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি টাউন হল প্রাঙ্গণ থেকে শহর প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কার্যালয়ের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। এ সময় সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রম্ন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মুক্তা ধরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

এদিকে বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে শহরের নিউজিল্যান্ড এলাকা এবং স্থানীয় অরুনিমা কমিউনিটি সেন্টারে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দেশীয় ও স্থানীয় পোশাক ও নানা শৌখিন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার প্রত্যন্ত জনপদ পোমাং পাড়ায় 'বৈসু'

উৎসবের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রম্ন চৌধুরী।

বৈসু উদ্‌?যাপন উপলক্ষে সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী, শিশু ও তরুণ-তরুণীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় গরিয়া বা গরয়া নৃত্য পরিবেশন করে ত্রিপুরা নৃত্যদল। এছাড়া দিনা ড্যান্স অ্যাকাডেমির শিল্পীরা বোতল নৃত্যের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।

তবে ত্রিপুরাদের বর্ষবরণের মূল আয়োজন শুরু হবে আগামী ১২ এপ্রিল। তিন দিন ধরে চলবে এ উৎসব। পুরনো বছরের শেষ দুই দিন উদ্‌?যাপন করা হবে হারি বৈসু ও বৈসুমা। আর নতুন বছরের প্রথম দিন উদ্‌?যাপন করা হবে বিচি কাতাল। এবার উৎসব চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে মংসুইপ্রম্ন চৌধুরী বলেন, 'আজকে পাহাড়ে মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সামাজিক উৎসব পালন করছে। আজ থেকে পাহাড়ে বৈসাবি উদ্‌?যাপন শুরু হলো। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বর্ণিল উৎসবে এখানকার মানুষ নতুন বছরকে বরণ করে নেবে।'

এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, 'শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছেন। তাই আজ এখানকার মানুষ উৎসব পার্বণে শামিল হতে পারছে।'

জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'যদিও বৈসু ১২ তারিখ থেকে শুরু হবে কিন্তু এখন থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ঐতিহ্যগতভাবে যেগুলো উদ্‌যাপন করে আসছি সেখানে অর্থনৈতিক বিষয়টা তেমন ছিল না। পারিবারিক-সামাজিকভাবে গ্রামভিত্তিক প্রোগ্রামগুলো করতাম। ছড়ায় ফুল পূজা, চড়ক পূজা করা হতো। কিন্তু সেগুলো অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে গেছে। প্রকৃত ঐতিহ্যগুলো ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বৈসু উদ্‌?যাপন কমিটির প্রধান আয়োজক কার্তিক ত্রিপুরা বলেন, 'ত্রিপুরাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে আমাদের যে সংস্কৃতির চর্চা হয়ে আসছিল তা কালের বির্বতনে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। নিজের স্বকীয়তা রক্ষায় বৈসু উদ্‌?যাপনের গুরুত্ব রয়েছে।' পোমাং পাড়ায় এই আলোচনা সভার আগে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন অতিথিরা।

বৈসু উদ্‌?যাপন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাশেম, ভাইস চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ান, মেরং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ঘনশ্যাম ত্রিপুরা প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে