রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঈদে ফার্নিচার কেনাবেচা তুঙ্গে

এবারও ঈদ ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানীর ফার্নিচারের বাজার। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফার্নিচারের শোরুমে বেড়েছে কেনাকাটা
রেজা মাহমুদ
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ঈদ ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানীর ফার্নিচারের বাজার এবং শোরুমে চলছে বিক্রির উৎসব -সংগৃহীত

অনেক দিন ধরেই বাসার জন্য নতুন সোফা কেনার কথা ভাবছিলেন মিসেস বুশরা। অবশেষে এবার ঈদে পছন্দের ডিজাইনের সোফা অর্ডার করেছেন এই গৃহিণী। এদিকে জানুয়ারিতে মেয়ে স্কুলে ভর্তি হলেও পড়ার টেবিল কেনা হয়নি। তাই ঈদে তার জন্য টেবিল কিনতে ফার্নিচারের দোকানে এসেছেন নাদিম হোসেন। নাদিম-বুশরার মতো অনেকেই এবার ঈদে ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন ফার্নিচার কিনতে ভিড় করছেন শোরুম ও ফার্নিচারের দোকানগুলোতে।

ফলে এবারও ঈদ ঘিরে জমে উঠেছে রাজধানীর ফার্নিচারের বাজার। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফানিচারের শোরুমগুলোতে কেনাবেচা তুঙ্গে। থেমে নেই ননব্র্যান্ডের দোকানও। ক্রেতারা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী কিনছে ঘর সাজানোর নানা আসবাসপত্র।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতা ভিড় বেড়েছে সেইসঙ্গে বেড়েছে বিক্রির পরিমাণও। তবে গত বছরের তুলায় দাম অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এদিকে দাম বাড়লেও ক্রেতা টানতে হরেক রকম ছাড় ও ইনস্টলমেন্ট সুবিধা দিচ্ছে ফর্নিচার কোম্পানিগুলো। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে অন্যান্য পণ্যের মতো ফার্নিচারের বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

আসবাসপত্র ও বিভিন্ন ফার্নিচার বিক্রেতারা জানান, করোনা শুরুর পর থেকেই এখাতে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে যায়। এরপর বছরের বিভিন্ন সময়ে টুকটাক বেচাকেনা হলেও কাঙ্ক্ষিত বিক্রি নেই অনেকেরই। জানা গেছে সারা বছর যে পরিমাণ ফর্নিচার বিক্রি হয় তার বড় একটি অংশই হয়ে থাকে বাণিজ্য মেলায়, কিন্তু শেরেবাংলা নগর থেকে মেলা পূর্বাচলে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ফার্নিচার বিক্রি অনেকটা কমে যায়। তবে এবার ঈদে ক্রেতারা ফার্নিচার কিনছেন।

এদিকে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ফার্নিচারের শোরুমে চলছে বিক্রয় উৎসব। রয়েছে ছাড় ও বিভিন্ন পুরস্কারের ব্যবস্থা। এদিকে ক্রেতা চাহিদার বড় অংশই ব্র্র্যান্ড নির্ভর। মূলত স্টাইলিস ডিজাইন ও রাজধানীর বাসাবাড়ির আয়তনের উপযোগী করে ফার্নিচার তৈরির কারণে এর ক্রেতা চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সে ক্ষেত্রে সবার থেকে এগিয়ে ওক কাঠের প্রসেসিং

ফার্নিচার। এরপর উডেন ও স্টিলের ফর্নিচার।

ক্রেতারা জানান, অন্যান্য ফার্নিচারের তুলনায় কাঠের ফার্নিচার তুলনামূলক ভালো ও দীর্ঘস্থায়ী হলেও ওক কাঠের ফার্নিচার বেশি স্টাইলিস। এছাড়াও এসব ফার্নিচারেরও এখন গ্যারেন্টি রয়েছে। বাসা পরিবর্তনের সময় এসব ফার্নিচার সহজেই খুলে নিয়ে সেটআপ করা যায়।

এদিকে বাজারে সারা ফেলেছে মাল্টিপার্পাস ফার্নিচারে ডিজাইনগুলো। অর্থাৎ দিনে সোফা এবং রাতে বেড হিসেবে ব্যবহার করা যায়- এমন সুবিধা রয়েছে একটি ফার্নিচারে। এমন বিভিন্ন ফার্নিচারের ডিজাইন রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। তবে দাম একটু বেশি।

ক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে ফার্নিচারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ হাজার টাকায় ওক কাঠের আলমিরা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ হাজার টাকার ওপরে। সবচেয়ে দাম বেশি কাঠের ফর্নিচারের। অন্যদিকে ব্র্যান্ডের ওপর ভিত্তি করে ওক কাঠের ফার্নিচারে দাম বেশ চড়া। দেখা গেছে রিগ্যালে ওক কাঠের মাঝারি আকারের শোকেজ এর দাম ২০ হাজার হলেও হাতিলে তা ১ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রসেসিং ওক কাঠের ফার্নিচারের বেশির ভাগ ম্যাটেরিয়াল আমদানি নির্ভর। তাই ডলারের দামের সঙ্গে এর দাম ওঠানামা করে। এছাড়াও ফার্নিচার যেহেতু বিলাসবহুল পণ্য, তাই এর আমদানিতেও গত দু-বছর ধরে বিধিনিষেধ রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে কর প্রদানের হারও, ফলে দামও বেড়েছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি ফার্নিচার ব্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, উডেন ফার্নিচারের মধ্যে বেড কিং সাইজের দাম পড়বে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার উপরে। ডাবল বেড ২৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। আলমারি টু পার্ট থেকে ফোর পার্টের দাম ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। শোকেস ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ওপরে।

এর বাইরে ডাইনিং টেবিল ৩০ হাজার ১ লাখ এবং চেয়ার ৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। পার্টেক্স বেড সিঙ্গেল ১৫ হাজার ৩০ হাজার টাকা। আলমারি ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, বুক শেলফ ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং কম্পিউটার টেবিল ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বিক্রেতারা জানান ঈদে অনেকেই নতুন ফার্নিচার দিয়ে নিজের ঘরটি সাজাতে চায়। তাই বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। তবে এবার অন্যবারের তুলনায় বিক্রি ভালো। তাই ৫ থেকে ২৫ শতাংশ ছাড় বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ আসবাবপত্র। নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার সুযোগও দিচ্ছেন তারা। এছাড়াও থাকছে এক বছরের বিক্রয় পরবর্তী সেবা। প্রথম রোজা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্রয় উৎসব চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।

এবারের ঈদে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফার্নিচারে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। এ ছাড়া দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে। মিরপুর রোকেয়া সরণির হাতিল ফার্নিচারের শোরুমে পস্নাইউড, কাঠ ও স্টিলের তৈরি আসবাবপত্র কিনতে ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ঈদ উপলক্ষে হাতিলের সব ফার্নিচারে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। দেশের ব্র্যান্ড ফার্নিচার শোরুমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আখতার ফার্নিচার। ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় তাদের শাখা রয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে ব্রাদার্স ফার্নিচারও তাদের ক্রেতাদের জন্য ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। রমজান মাসজুড়ে ব্রাদাসের সব পণ্যে এই ছাড় থাকবে।

এদিকে ঈদ উৎসবে হাউজ হোল্ড উডেন্ট ফার্নিচারে ১৭ শতাংশ এবং অফিস ফার্নিচারে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে নাভানা ফার্নিচার। এছাড়া লাইফস্টাইল প্রোডাক্টে রয়েছে ১০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত বিশেষ ছাড়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে