দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আর এই ঈদ উৎসব ঘিরে চড়া ভোগ্যপণ্যের বাজার। এদিকে বছরজুড়েই নানা অজুহাতে বাজার অস্থিতিশীল থাকছে। বিশেষ করে উৎসবগুলোতে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম চলে যায় ক্রেতার নাগালের বাইরে। রমজানের শেষ শুক্রবারে রাজধানীর বাজারে হঠাৎ করেই বেড়েছে ঈদে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের দাম। সব ধরনের মাংসসহ পোলার চাল মসলা পণ্যে ক্রেতাদের বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে।
এ দিন রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা দরে। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। একই অবস্থা ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামেও। প্রায় এক মাস ধরে স্থিতিশীল থাকা এই দুই পণ্যের প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ টাকা। এছড়োও খোলা পোলার চালের কেজি দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। বাড়তিই রয়েছে প্যাকেট পোলার চাল দাম। এদিকে রমজানে দুই-দফা বেড়ে চড়া দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য চালের বাজার।
এ দিন রাজধানীর বাজারে খোলা পোলার চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২৬ থেকে ১২৮ টাকা দরে এবং প্যাকেট ১৬০ কেজি দরে। অন্যদিকে মোটা চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকা দরে, মাঝারি মানের চালের মধ্যে পাইজাম ও বিআর ২৮ এর কেজি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দরে, যা আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৬ থেকে ৮০ টাকা দরে। দেখা গেছে প্রথম রমজানের তুলনায় সব ধরনের চালের কেজিতে ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিকে আমদানি বৃদ্ধিতে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মসলার দাম কমতির দিকে থাকলেও রাজধানীর বাজারে চিত্র ভিন্ন। এখনো খুচরা বাজারে নেওয়া হচ্ছে আগের বাড়তি দাম। বিক্রেতারা বলছেন, এসব মসলা তাদের আগের দামে কেনা, তাই দাম বেশি পড়ছে।
এবার রোজার আগে থেকেই সব ধরনের মসলার দাম বাড়তির দিকে ছিল। যা রমজানজুড়েই অব্যাহত ছিল। দারুচিনি, গোল মরিচ, সাদা মরিচ, লবঙ্গ থেকে শুরু করে সব ধরনের মসলার দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। সম্প্রতি পাইকারিতে দাম কমে আসলে খুচরা আগের দাম অব্যাহত রয়েছে।
গত বছর যে এলাচ কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ছিল, সেই এলাচ এ দিন বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে দারুচিনি বিক্রি হয়েছে ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকায়। দুই মাস আগেও যে লবঙ্গ ছিল ১ হাজার ৪৫০ টাকা কেজি। তা এ দিন বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে। এছাড়া কালো গোলমরিচ ৮২০ টাকা, সাদা মরিচ ১ হাজার ২০০ টাকা, আলুবোখারা ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
দেখা গেছে গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে বেশির ভাগ পণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়াও গতবারের চেয়ে ব্যয় ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে মসলা পণ্যে। তবে পেঁয়াজের মৌসুম ও আমদানির কারণে গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে রয়েছে পেঁয়াজের দাম। তবে গত ঈদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আদা-রসুনসহ গরম মসলার দাম। এর বাইরে চিনি গুঁড়োদুধে দাম গত বছরের তুলনায় ১৫ থেকে
২৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে না আনতে পারলে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। দেখা গেছে বাজার সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে উৎপাদন কিংবা আমদানি খরচের তুলনায় বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যে ভোক্তাকে ২০ শতাংশের মতো বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান, বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে পণ্য আমদানিসহ মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না।
তবে বাজারে এখনো কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে সবজির দাম। তবে ঈদের পর ফের সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ দিন সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুনের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। একইভাবে শসার কেজিতে প্রায় বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা এবং লাউ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। এছড়া মিষ্টিকুমড়া, চিচিঙ্গা, গাজর, টমোটো, ঝিঙ্গার মতো সবজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
চিংড়ি ও ইলিশ ছাড়া প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ বাজার। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০০ টাকার উপরে। ৮০০ গ্রামের ওপর ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬০০ এবং ১ কেজির ওপর ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে। মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ টাকা, বড় পাঙ্গাশ ২২০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা,শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, মলামাছ ৫০০ টাকা, বাইলা ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গুঁড়ামাছ ৩০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৫০০ টাকা, গলদা ৯০০ এবং রূপচাঁদা ১২০০ টাকা দরে।