ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন

ভোগান্তিবিহীন যাত্রায় খুশি ঘরমুখো মানুষ

আজ থেকে চলবে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন, সদরঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়, নৌপথে ঢাকা ছাড়বেন ২২.৫০ লাখ মানুষ

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। ছবিটি বৃহস্পতিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে তোলা -স্টার মেইল
আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরুর দ্বিতীয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সপ্তাহজুড়ে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের 'যুদ্ধ' শেষে এদিনও যাত্রীরা পরিবার-পরিজনসহ ট্রেন-বাস ও লঞ্চে চেপে ছুটেছেন যে যার গন্তব্যে। ভোর থেকেই রাজধানীর মহাখালী-গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলস্টেশন ছিল গন্তব্যমুখী যাত্রীদের পদচারণায় মুখর। এর মধ্যে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সদরঘাট পৌঁছতে যাত্রীদের অনেককেই যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভোগান্তিহীনভাবেই ঈদযাত্রা শুরু করেছেন তারা। এতে খুশি ঘরমুখো মানুষ। এদিকে, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আজ থেকে সারাদেশে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা উদ্যোগ নিয়ে মাঠে রয়েছে। এবার শুরু থেকেই ভোগান্তিহীনভাবে ঈদযাত্রা শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। অতীতের মতো এ বছর ট্রেন স্টেশনে উপচেপড়া ভিড় বা সিডিউল বিপর্যয় নেই। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যমুখী ট্রেন। গত ২৫ মার্চ যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট পেয়েছেন, তারা বৃহস্পতিবার রওনা হয়েছেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে। কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনে যাত্রীচাপ স্বাভাবিক রয়েছে। সিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই কমলাপুর স্টেশন থেকে একের পর এক ছেড়ে যাচ্ছে সব ট্রেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এদিন ৬৭ জোড়া ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা। নাড়ির টানে বাড়িফেরা যাত্রীদের নিরাপত্তায়ও কমলাপুর স্টেশনে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পজ মেশিন দিয়ে টিকিট ভেরিফাই করে এরপর পস্ন্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। পস্ন্যাটফর্মে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রবেশ রোধ করতে স্কাউট এবং রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরাও কাজ করছেন। যাত্রীরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী ফারহান জনি বলেন, 'অনলাইনে টিকিট পেতে একটু ঝামেলা হলেও স্টেশনে এসে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। যথাসময়ই পস্ন্যাটফর্মে ট্রেন এসেছে। এ ছাড়া টিকিটবিহীন যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারায় ভিড়ও কম।' কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন যাত্রীর চাপ না বাড়লেও শনিবারের পর থেকে ভিড় বাড়বে। সে জন্য রাখা হয়েছে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস। বাড়ানো হবে নিরাপত্তাব্যবস্থাও। রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, 'বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২০ জোড়া ট্রেন যথাসময় কমলাপুর ছেড়ে গেছে। ৪২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং লোকাল-কমিউটার মিলে ২৫টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে।' এদিকে, দ্বিতীয় দিনের মতো এদিনও ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এদিন বিক্রি হয় ১৪ এপ্রিলের টিকিট। অনলাইনে টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর পশ্চিমাঞ্চলের সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টা থেকে এবং পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টা থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রীদের অনুরোধে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট ভ্রমণের দিন যাত্রা শুরুর আগে স্টেশন থেকে পাওয়া যাচ্ছে। একজন যাত্রীর সর্বাধিক চারটি টিকিট কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এই টিকিট ফেরতযোগ্য নয়। এদিকে, বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, 'এবারের ঈদযাত্রায় সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। আশা করি, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। শেষ মুহূর্তের সরকারি বেসরকারি ছুটি ও গার্মেন্ট ছুটি হলে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাবে, সেদিক লক্ষ্য রেখে কাল (শুক্রবার) থেকে সারাদেশে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।' জানা গেছে, ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে ৫ দিন চালানো হবে। এ ছাড়াও কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে তিন দিন চলাচল করবে। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীরা ভিড় করতে থাকেন। যাত্রীদের ঘাটে পৌঁছতে তীব্র যানজটের ধকল সইতে হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে। জানা যায়, সেহরির পর থেকেই টার্মিনালের পন্টুনে বাড়তে থাকে যাত্রীদের উপস্থিতি। ভোরের আলো বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে যাত্রীর চাপ। চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পন্টুনে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও বরিশাল রুটে যাত্রীর চাপ কম ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই কেবিনের অগ্রিম টিকেট কিনতে এসেছিলেন। গত ১ এপ্রিল থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরু থেকেই যাত্রী বেড়েছে সদরঘাটে। লঞ্চ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন লঞ্চে যাত্রী সংকট থাকলেও ঈদ উপলক্ষে এখন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই পরিবার নিয়ে ঈদে বাড়ি ফিরতে অগ্রিম টিকিটও বুকিং দিচ্ছেন। তবে বিগত ঈদগুলোর চেয়ে এবার যাত্রী সংখ্যা কম বলে জানান তারা। ঈদ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার থেকে প্রতিটি রুটে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানান তারা। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ফারহান-৯ এর করণিক পারভেজ আহমেদ বলেন, 'আমাদের লঞ্চ কয়েকদিন পর ট্রিপ শুরু করছে। এতদিন যাত্রী ছিল না। তবে আজ কেবিনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। ডেকেও ২৫০ এর বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। ঈদের কারণে এখন যাত্রী কিছুটা বেড়েছে।' বরিশালগামী যাত্রী হাসান আলী বলেন, 'পরিবারের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য এসেছি। আমি পরে যাব। এবার ভোগান্তি কম হয়েছে। আসার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট পেয়েছি। লঞ্চের ভাড়াও বাড়েনি।' সংশ্লিষ্টরা জানান, ৮ এপ্রিল পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কেবিন বুকিং হয়ে গেছে। পারাবত-১১ এর করণিক এনামুল হক বলেন, 'আমরা আগে থেকেই অগ্রিম টিকিয় বিক্রি শুরু করেছি। এখনো তেমন বিক্রি হয়নি। তিন ভাগের একভাগ অগ্রিম কেবিন বুকিং হয়েছে এ পর্যন্ত। ২৭ বা ২৮ রমজানের টিকিট একটু বেশি বিক্রি হতে পারে।' সদরঘাট নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালামের জানান, 'ঈদ ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। শৃঙ্খলা রক্ষা করা, ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্র যেন কোনোভাবেই মানুষকে বিপদে ফেলতে না পারে- সবকিছু আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। পুলিশের টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।' শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঈদপূর্ব পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়বেন। এটি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রত্যাশিত যাত্রীর মাত্র ১৫ শতাংশ। দুই বছর আগে ঢাকার ঈদযাত্রীদের ২৫ শতাংশ (৩৭ লাখ ৫০ হাজার) নৌপথ ব্যবহার করত। আর সড়ক ও রেলপথে যাতায়াত করত যথাক্রমে ৫৫ ও ২০ শতাংশ মানুষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও হাতিয়া ছাড়া অন্য জেলাগুলোর নৌযাত্রীর হার ৪০ শতাংশ কমেছে; যা মোট ঈদযাত্রীর ১০ শতাংশ। এই হিসাবে এবার ঈদে নৌপথে যাবে আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও ঘাট কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে রাজবাড়ী জেলা ও গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সমন্বয় সভা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিআইডবিস্নউটিসি সূত্রে জানা যায়, ঈদে ঘরমুখো মানুষে নির্বিঘ্নে পারাপার করতে ১৫টি ফেরি, ২০টি লঞ্চ এবং ১০টি স্পিডবোট চলাচল জন্য প্রস্তুত রেখেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরিদ উদ্দিন বলেন, 'ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অতিরিক্ত নিরাপত্তারব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীতেও থাকবে নৌ-পুলিশের টহল। লঞ্চে ও ফেরিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিতে দেওয়া হবে না। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি লঞ্চে পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখতে বলা হয়েছে। ফেরির মধ্যে জুয়াখেলা ও ছিনতাই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।' বিআইডবিস্নউটিসি'র দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বানিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, 'দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঈদ উপলক্ষে বাড়তি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ সামাল দিতে ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে তিনটি ঘাট। আশা করছি, নির্বিঘ্ন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।' অতিরিক্ত পরিবহণে লাখ টাকা জরিমানা : মহাসড়ক সচিব ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, এবারের ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালালে, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ এবং অতিরিক্ত ভাড়া নিলে তাৎক্ষণিক জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমীনউলস্নাহ নূরী। তিনি বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে হবে। এ জন্য আলাদা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত থাকবেন। মহাসড়কের পাশে কোনো বাজার থাকবে না। আর হাইওয়ে সড়কে কোনোভাবেই কোন থ্রি হুইলার চলতে পারবে না। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদযাত্রা ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে আয়োজিত এক গণশুনানি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমানউলস্নাহ নূরী বলেন, 'এবার হাইওয়েতে থ্রি হুইলার চলবে না। এক্সপ্রেসওয়ে দ্রম্নতগতির সড়ক। এখানে কোনো ছোট গাড়ি ঢুকবে না। আমরা কাউকে মৃতু্যর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আমাদের সবার দায়িত্ব তাদের বাঁচিয়ে রাখা।' যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে তিনি ফরিদপুর-ভাটিয়াপাড়া রুটে বিআরটিসির লোকাল বাস চালুর নির্দেশ দেন। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শাহিন আলম, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম, ভাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ফয়েজ মো. রেজা, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ, এনজিও প্রতিনিধি আসমা আক্তার মুক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। স্বাচ্ছন্দ্যময় ঈদযাত্রা উপহার দিতে চাই : ট্রাফিক বিভাগ গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক বছরের ঈদযাত্রা যেমন সুন্দর হয়েছে, নিরাপদ হয়েছে, স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়েছে, যানজটমুক্ত হয়েছে; এবারও আমরা স্বাচ্ছন্দ্যময় ঈদযাত্রা উপহার দিতে চাই বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন খান। বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ যাত্রায় শামিল না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'শিল্প কারখানা অধু্যষিত অঞ্চলের শ্রমিক ভাইরা তারা কিন্তু অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় সামিল হন। খোলা ট্রাকে, পিকআপে, বাসের ছাদে উঠে গন্তব্যে যান। এভাবে নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলেন এবং অনেকবার দেখেছি দুর্ঘটনায় বহু জীবন ঝরে যায়। আমরা বলবো, আপনারা সচেতনভাবে নিজের জীবনকে ভালোবেসে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় শামিল হবেন না।' এ সময় উপস্থিত ছিলেন- হাইওয়ে পুলিশের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জী, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সীমা রানী সরকার প্রমুখ। টার্মিনালের বাইরে যাত্রী ওঠানামা নয় : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অন্যদিকে ঈদযাত্রার সময় রাস্তায় যাত্রী ওঠানো-নামানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেছেন, টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর কোনো অবস্থাতেই রাস্তায় যাত্রী ওঠানো-নামানো করা যাবে না। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্ধারিত সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'ছাদে কোনো যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে যাবেন না। মোটর সাইকেল নিয়ে দূরের যাত্রায় নিরাপত্তার দিকগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।' তিনি বলেন, 'মোটর সাইকেল চালকদের অতিরিক্ত মালামাল বা যাত্রী বহন না করার জন্য অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সব ধরনের যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজ ও নথিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।' সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা ছুটি হলে লাখ লাখ শ্রমিকের বাড়ি ফেরার সুযোগ নিয়ে অনেক ফিটনেসবিহীন গাড়ি অযাচিতভাবে রাস্তায়, মহাসড়কে নামানোর চেষ্টা করেন। এতে যানজটের পাশাপাশি ঝুঁকি থাকে। এটা পরিহার করতে হবে।' এ সময় টার্মিনালের বাইরে থেকে বাসে না ওঠার জন্য তিনি সাধারণ যাত্রীদেরও আহ্বান জানান তিনি।