বড় হারে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া ডেস্ক
কথায় বলে ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। আর সেখানে যদি যোগ হয় ব্যাটিং ব্যর্থতা, তাহলে তো লড়াইটাও জমে ওঠার কথা নয়। চট্টগ্রাম টেস্টেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টেস্ট পাঁচ দিনে গড়ালেও আদতে প্রথম দিন থেকেই চালকের আসনে ছিল শ্রীলংকা। যাত্রীর আসনে থাকা শান্ত-লিটনরা যখন গন্তব্যে নামেন, তখন তাদের সঙ্গী হয়েছে আরও একটি বড় হার।
চতুর্থ দিন শেষেই হারের দুয়ারে ছিল বাংলাদেশ। শেষ দিনে প্রথম সেশনে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলে সফরকারী দল শ্রীলংকা। ৭ উইকেটে ২৬৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে ৩১৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের শেষ ইনিংস। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের পঞ্চম দিনে এসে লংকানদের কাছে ১৯২ রানের ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৫১১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৮ রানে অলআউট হয়েছে টাইগাররা। সিলেট টেস্টে তারা হেরেছিল ৩২৮ রানে।
টেস্টে আগের পাঁচ ইনিংসে দুইশ'ও করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর ২০ বছর আগে ঘরের মাঠে এমন করুণ দৃশ্য দেখেছিল টাইগাররা। তবে চট্টগ্রামে দুইশ তো বটেই, দ্বিতীয় ইনিংসে পুঁজি পার করল তিনশ'র কোটাও। হোয়াইটওয়াশ হওয়ার এই ম্যাচে কেবল এই একটা সান্ত্বনাই খুঁজে পেতে পারে বাংলাদেশ।
আগের চার দিন ধুঁকতে ধুঁকতে এগিয়ে যাওয়া টাইগাররা পঞ্চম দিনে যখন লক্ষ্য তাড়ায় নামে তার আগেই সাত ব্যাটার সাজঘরে। এ দিন প্রথম চার ওভার নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে পঞ্চম ওভারে এসে ফিফটি তুলে নেন ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে সেই ওভারেই বিদায় নেন তাইজুল ইসলাম। তখনই কার্যত শেষ দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বোলিং করা কামিন্দু মেন্ডিস তুলে নেন তাইজুলের উইকেট। তার অফস্টাম্পের বাইরে রাখা বলে ড্রাইভ করতে গেলে স্স্নিপে নিশান মাদুশকার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ২৮ বলে ১৪ রান করেন তাইজুল। এরপর হাসান মাহমুদ ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ কিছুটা চেষ্টা করলেও খুব বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। দু'জনই শিকার করেছেন লাহিরু কুমারা। বডি লাইন বাউন্সারে হাসানকে শিকার করেন তিনি। যা ঠেকাতে গিয়ে মাদুশকার হাতে সহজ ক্যাচ তুলে বিদায় নেন হাসান। ৬ রান করলেও ২৫টি বল মোকাবিলা করেন তিনি।
এরপর একই কায়দায় খালেদকেও ছাঁটাই করতে চেয়েছিলেন কুমারা। তাকেও বডিলাইন বাউন্সারে কাবু করতে চেয়েছিলেন কুমারা। টানা চারটি শর্ট বল কোনোমতে ঠেকান খালেদ। এরপর টানা দু'টি ইয়র্কার। যার প্রথমটিতে স্টাম্প বাঁচাতে পারলেও দ্বিতীয়টিতে পারেননি। ফলে বড় হারই দেখতে হয় বাংলাদেশকে। অপর প্রান্তে তাকিয়ে দেখেছেন ৮১ রানে অপরাজিত থাকা মিরাজ।
বাংলাদেশের এমন দুরবস্থার শুরুটা অবশ্য ক্যাচ মিসের গল্প দিয়ে। লংকানদের প্রথম ইনিংসেই সাতটি সহজ ক্যাচ ছাড়েন। ফলে ৩১ রানের বড় পুঁজিই পেয়ে যায় শ্রীলংকা। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে আত্মাহুতির মিছিলে নামেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১৭৮ রানেই গুটিয়ে যান তারা। পরে দ্রম্নত ৭ উইকেটে ১৫৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করলে ৫১১ রানের বড় লক্ষ্যই পায় বাংলাদেশ।
শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৬ টেস্টে বাংলাদেশের ২০তম পরাজয় এটি। একমাত্র জয়টি ছিল সেই ২০১৭ সালে কলম্বোর পি সারা ওভালে। ড্র হয়েছে বাকি ৫ টেস্ট।
প্রথম ইনিংসে ৯২ রানের দারুণ ইনিংস খেলার পাশাপাশি শেষ ইনিংসে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা কামিন্দু মেন্ডিস। আগের টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা এই ক্রিকেটার পেয়েছেন ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারও। আর এই সফরে টি২০ ও টেস্ট সিরিজ জিতে দেশে ফিরছে শ্রীলংকা। বাংলাদেশ জিততে পেরেছে ওয়ানডে সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস: ৫৩১
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৭৮
শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৫৭/৭ (ডি.)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৮৫ ওভারে ৩১৮ (আগের দিন ২৬৮/৭) (মিরাজ ৮১*, তাইজুল ১৪, হাসান ৬, খালেদ ২; ভিশ্ব ১/৯, আসিথা ০/৬২ কুমারা ৪/৫০, জায়াসুরিয়া ২/৯৯, ধানাঞ্জয়া ০/২৫, কামিন্দু ৩/৩২)
ফল:শ্রীলংকা ১৯২ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে শ্রীলংকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : কামিন্দু মেন্ডিস।
সিরিজ সেরা : কামিন্দু মেন্ডিস।