হার একপ্রকার নিশ্চিত। বাংলাদেশের লড়াইটা এখন শুধু ব্যবধান কমানোর। চতুর্থ দিন শেষে জাত ব্যাটার বলতে ক্রিজে আছেন কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ। টেইলএন্ডারদের নিয়ে শেষ দিনে তিনি ব্যবধানটা কত কমাতে পারেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। বলা যায় পরাজয়ের প্রহর গুনেই চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থদিনে খেলা শেষ করেছে শান্তর দল।
চট্টগ্রাম টেস্টে ৫১১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬৮ রান। জয়ের জন্য লঙ্কানদের প্রয়োজন ৩ উইকেট, আর স্বাগতিকদের দরকার ২৪৩ রান। ৪৯ বলে ৭ চারের মারে ৪৪ রানে অপরাজিত আছেন মিরাজ। তার সঙ্গী তাইজুল ইসলাম ১৪ বলে ১০ রানে অপরাজিত আছেন।
সাকিব আল হাসান আউট হতেই হারের শঙ্কা জেগে উঠেছিল। সেটা বিলম্বিত করেন লিটন দাস ও শাহাদাত হোসেন। তবে এই দুজন বিদায় নিলেও ম্যাচ ঠিকই পঞ্চম দিনে নিয়ে গেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন তাইজুল ইসলাম।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। জিততে হলে বুধবার পঞ্চম দিনে অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। ৩ উইকেট হাতে নিয়ে করতে হবে আরও ২৪৩ রান।
শ্রীলংকার ছুঁড়ে দেওয়া ৫১১ রানের পাহাড়সমান লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চা-বিরতির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৩২ রান। চা-বিরতি থেকে ফিরে লঙ্কান বোলারদের শক্ত হাতে সামাল দেন উইকেটকিপার ব্যাটার লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। তবে দিনের শেষ ঘণ্টাতেই ঘটে ছন্দপতন।
লঙ্কান বোলারদের শক্ত হাতে সামাল দেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। জয় ১৯ ও জাকির ১১ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম সেশন শেষ করেন।
মধ্যাহ্নবিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় ওভারে জয়সুরিয়াকে চার হাঁকান জয়। একই ওভারে জয়সুরিয়ার বলে বোল্ড হন এই ওপেনার। ফেরার আগে তিন চারে সাজান ২৪ রানের ইনিংস। এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি শান্ত-জাকির জুটি। বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্স্নিপে ধরা পড়েন জাকির। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান। পরে মুমিনুলকে সঙ্গী করে রানের গতি বাড়াতে থাকেন শান্ত। তবে লাহিরু কুমারার বলে বোল্ড হয়ে শান্ত ফিরলে ভাঙে তাদের ৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ৫৫ বলে ২০ রান করে ফেরেন টাইগার দলপতি। এরপর জুটি গড়েন মুমিনুল ও সাকিব। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রম্নতই ফিফটি তুলে নেন মুমিনুল। তবে হঠাৎ-ই জয়সুরিয়ার বলে ক্যাচ তুলে দেন সাবেক এই অধিনায়ক। ৫৬ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৫০ রান করে শেষ হয় তার চট্টগ্রাম টেস্টের এই অধ্যায়।
মুমিনুল ফেরার পর লিটনকে নিয়ে জুটি গড়ে চা-বিরতিতে যান সাকিব। দু'জনেই উইকেটে থিতু হয়েছিলেন। খোলস ছেড়ে ব্যাট করতে থাকা সাকিবের ব্যাটে ভর করেই স্বপ্ন বুনেছিল বাংলাদেশ। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
ইনিংসের ৫০তম ওভারে কামিন্দু মেন্ডিসের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বলে পয়েন্টে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে আউট-সাইড এডজ হয়ে গালিতে থাকা ফিল্ডারের কাছে চলে যায় বল। এতে থামে সাকিবের ৫৩ বলে ৩৬ রানের ইনিংস।
সাকিব ফেরার পর লিটনও ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি। লাহিরু কুমারার খাটো লেংথে ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। তবে খানিকটা থেমে আসায় ঠিকঠাক মতো বল ব্যাটে লাগেনি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে কুশল মেন্ডিসের গস্নাভসে ধরা পড়েন লিটন। এতে ৭২ বলে ৩৮ রানে থামে তার ইনিংস।
চতুর্থ দিনের একদম শেষবেলায় ড্রেসিং রুমে ফেরেন দিপু। কামিন্দু মেন্ডিসের অফ স্পিনে এলবিডবিস্নউ হয়ে ৩৪ বলে ১৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন তরুণ এই ব্যাটার।
চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৬৮ রান। পঞ্চম ও শেষ দিনে জয়ের জন্য ২৪৩ রান প্রয়োজন বাংলাদেশের। তাইজুল ইসলাম ১০ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৪ রানে পঞ্চম ও শেষ দিনের খেলা শুরু করবেন।
এর আগে ৬ উইকেটে ১০২ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে সফরকারীরা। তৃতীয় দিন শেষে ৩৯ রান করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এদিন হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে ব্যক্তিগত ৫৬ রানের মাথায় সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে লঙ্কান এই অলরাউন্ডারকে ফিরতে হয়। এরপর মাত্র ৪ ওভার ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ততক্ষণে টাইগারদের সামনে ৫১১ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রান সংগ্রহ করে শ্রীলংকা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংসের ৩৫৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল লঙ্কানরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলংকা ১ম ইনিংস: ৫৩১
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৭৮
শ্রীলংকা ২য় ইনিংস: ১৫৭/৭ ইনিংস ঘোষণা
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫১১) ৬৭ ওভারে ২৬৮/৭ (জয় ২৪, জাকির ১৯, শান্ত ২০, মুমিনুল ৫০, সাকিব ৩৬, লিটন ৩৮, শাহাদাত ১৫, মিরাজ ৪৪*, তাইজুল ১০*; বিশ্ব ১/৩৯, আসিথা ০/৫২, কুমারা ২/৪১, জয়সুরিয়া ২/৭৯, ধনঞ্জয়া ০/২৫, কামিন্দু ২/২২)। চতুর্থ দিন শেষে।