দীর্ঘ ২০ বছর মেধা ও মনন খাটিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখচ্ছবির আদলে মেডিকেল কলেজের নকশা তৈরি করেছেন বগুড়ার স্থাপত্যবিদ এ. বি. এম. মনোয়ারুল হাসান মিঠু। এই নকশা বাস্তব রূপ পেলে স্থাপত্যশিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে দাবি করেছেন এই স্থাপত্যবিদ।
ইতোমধ্যে নকশাটি থ্রি-ডিতে রূপান্তর করেছে মিঠু। সেখানে ৫ তলাবিশিষ্ট একটি স্থাপত্যকে বিভিন্ন দিক দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভবনটি আকাশ থেকে দেখতে অবিকল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো লাগবে। স্থাপত্যবিদ মিঠু পুরো গবেষণা শেষ করে যখন নিজের প্রতি দৃঢ় আস্থা দেখতে পেয়েছেন তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে উপস্থাপন করেন। তার দাবি, 'আমার ডিজাইন অনুযায়ী কোনো স্থাপনা তৈরি করলে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে স্থান পাবে।'
মিঠু তার গবেষণাটি নিয়ে যায়যায়দিনকে বলেন, 'হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই প্রয়াস। পৃথিবীর কোথাও
মানুষের প্রতিকৃতি দিয়ে নির্মিত কোনো স্থাপনা নেই। তাই, মানুষের প্রতিকৃতি দিয়ে প্রস্তুতকৃত এটিই হবে পৃথিবীর সর্বপ্রথম স্থাপনা। এই স্থাপনা বাস্তবায়িত হলে বিশ্বজুড়ে মানুষ দেখবে একজন মহান নেতার অনন্য প্রতিকৃতি।'
তিনি আরও বলেন, 'এই মডেলটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সদয় সম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর নামে যে কোনো বৃহৎ বা ছোট স্থাপনা এই স্থাপত্যশৈলীতে নির্মাণ করা সম্ভব'।
মিঠুর নকশা এবং থ্রিডি অনুযায়ী ভবনটি বাস্তবায়নে জায়গা প্রয়োজন ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৫ বর্গফুট। জমির প্রয়োজন ৯.৮৮১ একর। মূল অবকাঠামোটি হবে ২ লাখ ২৪ হাজার ৪১৫.২৩ বর্গফুট। ৫ তলা বিশিষ্ট এই অবকাঠামোটি নির্মাণে জমির আনুমানিক মূল্যসহ ব্যয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় প্রয়োজন প্রায় ৩ বছর। এই মডেল স্থাপনাটি নির্মাণে যে দক্ষ প্রতিষ্ঠান ও লোকবল প্রয়োজন হবে, তা আমাদের দেশেই রয়েছে।
স্থপত্যটির ভাবনা নিয়ে মিঠু বলেন, '১৯৯৫ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিলস্নুর রহমান বগুড়া এসেছিলেন। সেই সফরে বগুড়ায় ছাত্রলীগের একটি সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'তোমাদের চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে নতুন নতুন কিছু দিতে হবে।' তার সেই কথাকে কাজে লাগাতে আমি এই গবেষণায় মনোযোগ দেই। দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর সাধনার পর আমি সফলতার মুখ দেখি।
তবে পূর্ণ সফলতা তখনই আসবে যখন আমি আমার এই নকশার বাস্তবায়ন দেখতে পাব। আমি আশা করি আমার এই কাজ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি এটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন।'
এ.বি.এম. মনোয়ারুল হাসান মিঠু বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার মৃত- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাসেতের ছেলে। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন ১৯৯৮ সালে। এরপর আর্কিট্যাক্ট বিষয়ে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। তিনি গবেষণাটি চূড়ান্ত রূপ দিতে গিয়ে সব ধরনের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। মিঠু ছাত্রজীবনের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।