সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফাঁদে ফেলে পিন হাতিয়ে বিকাশের অর্থ লোপাট

চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার
যাযাদি রিপোর্ট
  ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ফাঁদে ফেলে পিন হাতিয়ে বিকাশের অর্থ লোপাট

অভিনব কৌশলে পিন নম্বর নিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টের অর্থ লোপাট করা হয়। প্রথমে ফোনে কল করে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার প্রলোভন, পরে বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে বিভিন্ন সংখ্যার সঙ্গে বিকাশ বা নগদের পিন নম্বর যোগ-বিয়োগ করতে বলে সেই ফল জেনে নেওয়া। এভাবেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকা।

এক আইনজীবীর মেয়েকে উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে একইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মো. সাজ্জাত হাওলাদার (২৬) নামে চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন এবং তিনটি সিম উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানায়, ফরিদপুরের বাসিন্দা গ্রেপ্তার সাজ্জাত ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে এলাকার সমবয়সি বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বিকাশ বা নগদের টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল রপ্ত করেন তিনি। পরে সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, ভুক্তভোগী এক অ্যাডভোকেটের মেয়ে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ওই অ্যাডভোকেটের ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয় ভালো রেজাল্টের জন্য তার মেয়ে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবেন। এজন্য তাদের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

সে অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি নির্ধারিত নম্বরে কল করলে ফোনের ওপার থেকে বকশীবাজার শিক্ষা বোর্ডের অফিসের পরিচয় দেওয়া হয়। আইনজীবীর মেয়ে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার ২০০ টাকা করে সাত মাস এবং এক বছর পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাসিক ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবেন বলে জানানো হয়।

এ সময় ফোনের ওপার থেকে ভুক্তভোগীর ব্যাংকের নাম, হিসাব নম্বর ও শাখার নাম জানতে চায় প্রতারক চক্রটি। পাশাপাশি একটি বিকাশ নম্বর ও মেয়ের মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি নম্বর জানতে চায়। ভুক্তভোগী এসব তথ্য দিলে তাকে জানানো হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কল করে আরও কিছু তথ্য চাইবে।

পরে ভুক্তভোগীর বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন মেসেজ আসে এবং একাধিক কোড ভুক্তভোগী সরবরাহও করেন। এক পর্যায়ে কল করে মোবাইলে ক্যালকুলেটর দেখতে বলা হয় এবং নির্দিষ্ট একটি নম্বরের সঙ্গে অন্য একটি নম্বর এবং বিকাশের পিন যোগ করে যোগফল জানতে চাওয়া হয়। ভুক্তভোগীও যোগফল জানান।

তখন তাকে ১২ ঘণ্টা তার বিকাশ লেনদেন বন্ধ রাখতে বলা হয় এবং অ্যাকাউন্ট চেক করতেও নিষেধ করা হয়। সন্দেহ হলে ১০-১৫ মিনিট পর ভুক্তভোগী বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন তার এক লাখ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এভাবে পরে আরও এক লাখ এবং ৮০ হাজার টাকাসহ মোট দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।

প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী। পরে মামলার তদন্তে নেমে সাজ্জাতকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)।

হারুন অর রশীদ বলেন, চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে কখনো বিকাশ বা নগদ অফিসের লোক, কখনো শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কল দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। টার্গেট ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করে বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে টাকা লোপাট করত।

বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টের তথ্য, পাসওয়ার্ড অপরিচিত কাউকে না দিতে অনুরোধ করেছেন ডিবিপ্রধান। প্রতারিত হলে পুলিশের আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে