রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস শেষ শ্রীলংকার

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম টেস্ট
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও কয়েকটি সহজ ক্যাচ মিস করেছে বাংলাদেশ। সেটার সুযোগ নিতে ভুল করেনি সফরকারীরা। রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস শেষ করেছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার শ্রীলংকা। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রানে থেমেছে শ্রীলংকা। প্রথম দিনের ৪ উইকেটে ৩১৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে এদিন আরও ২১৭ রান যোগ করেছে সফরকারীরা। ইনিংসে শ্রীলংকার কুশল মেন্ডিস ৯৩, কামিন্দু মেন্ডিস অপরাজিত ৯২, দিমুথ করুনারত্নে ৮৬, অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৭০, দিনেশ চান্ডিমাল ৫৯ ও নিশান মাদুশকা ৫৭ রান করেন। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ৩টি, হাসান মাহমুদ ২টি ও খালেদ আহেমদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে বাজে প্রদর্শনীর পর ব্যাট হাতেও শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। লঙ্কানদের বড় সংগ্রহের বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে ৪৭ রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয় (২১)। দিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৫৫ রান। লঙ্কানদের বড় রানের বোঝা নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে টাইগাররা। দ্বিতীয় দিন শেষে ৪৭৬ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। জাকির হাসান ২৮ ও তাইজুল ০ রানে অপরাজিত। প্রথম টেস্টেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দর্শক বানিয়ে রানের পাহাড় গড়েছিল শ্রীলংকা। সিলেট টেস্টে যেখানে বিজয়ী সফরকারীরা থেমেছিল, সেখান থেকেই যেন তারা চট্টগ্রাম টেস্টেও রানের পসরা সাজিয়েছে। এতে অবশ্য বড় ভূমিকা ছিল স্বাগতিক ক্রিকেটারদের। অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ হাতছাড়া করে তারা লঙ্কান ইনিংস বড় করতে সহায়তা করেছেন! প্রথম ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে রেকর্ড গড়ে লঙ্কানদের সংগ্রহ ৫৩১ রান। রানের পাহাড় গড়লেও দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে লঙ্কান ব্যাটারদের আশা জাগিয়েও সেঞ্চুরি করতে পারেননি তিন ব্যাটসম্যান। পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যান আরও তিনজন। কেউ তিন অঙ্ক ছুঁতে না পারলেও সম্মিলিত অবদানে ৫৩১ রান করল শ্রীলংকা। আর এতেই হলো বিশ্ব রেকর্ড। এর মাধ্যমেই সেঞ্চুরিবিহীন এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ল ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার দল। এর আগে ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত টেস্টের এক ইনিংসে ৫২৪ রান করেছিল। যা ছিল কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়া টেস্ট ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। যা টপকে আরও ৭ রান বেশি করেছে লঙ্কানরা। দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে বাংলাদেশ বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছেন চান্দিমাল ও ধনঞ্জয়া। এতে দু'জনই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। অবশেষে দিনের ১৬তম ওভারে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ বলে ৫৯ রান করা চান্দিমালকে শিকার করেন সাকিব। পঞ্চম উইকেটে চান্দিমাল-ধনঞ্জয়া ৮৬ রানের জুটি গড়েন। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ডাবল ও সেঞ্চুরির জুটিতে বাংলাদেশকে চরমভাবে ভুগিয়েছিলেন ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু মেন্ডিস। কিন্তু এবার আর পারেননি তারা। জুটিতে ৩৬ রান যোগ হবার পর বিচ্ছিন্ন ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭০ রান করে পেসার খালেদ আহমেদের বলে লেগ বিফোর আউট হন ধনঞ্জয়া। ধনঞ্জয়া ফেরার পর প্রবাথ জয়সুরিয়াকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন কামিন্দু। অবশ্য এই জুটি ৮ রানের বেশি যোগ করতে পারতো না, যদি না বাংলাদেশের তিন ফিল্ডার মিলে জয়সুরিয়ার ক্যাচ ফেলতেন। খালেদের করা ইনিংসের ১২১তম ওভারের শেষ বলে প্রথম সিস্নপে ক্যাচ দেন জয়সুরিয়া। সেই সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। তার হাতে বল লেগে দ্বিতীয় সিস্নপে দাঁড়ানো শাহাদাত হোসেনের দিকে যায়। তিনি বল হাতে রাখতে পারেননি। এরপর শাহাদাতের হাত ছুঁয়ে বল যায় তৃতীয় সিস্নপে দাঁড়ানো জাকির হাসানের কাছে। সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি জাকিরও। ৬ রানে জীবন পান জয়সুরিয়া। এরপর ব্যক্তিগত ২৪ রানে জয়সুরিয়ার ক্যাচ ফেলেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। দু'বার জীবন পেয়ে ৩টি চারে ২৮ রানে সাকিবের বলে আউট হন জয়সুরিয়া। দলীয় ৪৭৬ রানে জয়সুরিয়া থামার পর শ্রীলংকার রানের চাকা একাই ঘুরিয়েছেন কামিন্দু। স্পিনার তাইজুলের বলে ব্যক্তিগত ৬০ রানে কামিন্দুর ক্যাচ ফেলেন হাসান। জীবন পেয়ে শ্রীলংকার রান ৫শ' পার করেন কামিন্দু। সেই সঙ্গে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান তিনি। কিন্তু শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দো রান আউট হলে ৯২ রানে অপরাজিত থেকে যান কামিন্দু। তার ১৬৭ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। ছয় ব্যাটারের হাফসেঞ্চুরিতে ৫৩১ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। এই নিয়ে ১১তম বার টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০০ বা ততোধিক রান করল লঙ্কানরা। সেই সঙ্গে কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি ছাড়া সর্বোচ্চ দলীয় রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়ল শ্রীলংকা। সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলংকা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩১৪/৪) ১৫৯ ওভারে ৫৩১ (চান্দিমাল ৫৯, ধনঞ্জয়া ৭০, কামিন্দু ৯২*, জয়সুরিয়া ২৮, বিশ্ব ৬, আসিথা ০; খালেদ ১/৭১, হাসান ২/৯২, সাকিব ৩/১১০, মিরাজ ১/১৪৬, তাইজুল ০/১০৬)। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস:১৫ ওভারে ৫৫/১ (মাহমুদুল হাসান জয় ২১, জাকির ২৮*, তাইজুল ০*; লাহিরু কুমারা ১/৪)। দ্বিতীয় দিন শেষে।