ভারত থেকে এলো ১৬৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ
পর্যায়ক্রমে আসতে পারে আরও কয়েকটি চালান ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি হবে ৪০ টাকা কেজি দরে
প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ভারত থেকে আমদানি করা প্রথম চালানের এক হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। রোববার বিকাল সোয়া ৫টায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দরে এসে পৌঁছায় চালানটি। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চালানটি সিরাজগঞ্জে পৌঁছাবে। সেখান থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে।
দর্শনা রেলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবির) কর্তৃক ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান ভারত থেকে রেলপথে দর্শনায় এসে পৌঁছেছে। মোট ৪২টি ওয়াগনে এক হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আনা হয়েছে।
দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের ম্যানেজার মির্জা কামরুল হাসান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, টিসিবির আমদানি করা প্রথম চালানের পেঁয়াজ বুঝে পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পেঁয়াজের চালান ট্রেনে করে দেশে আসতে পারে।
এর আগে, রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত 'দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা' বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভা শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেডিং করপোরেশন আব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য সেহেতু আমরা ধরে রাখব না। কাল (সোমবার) থেকে আমরা ডিলারদের কাছ থেকে ...জমা নেওয়া শুরু করবো এবং একদিনের মধ্যে...। আমরা ৪০ টাকা নির্ধারিত মূল্যে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ওপেন সেল করব।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ঢাকায় ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করি, আমি বিশ্বাস করি ৬৪ জেলার অন্তত ৩০টি জেলায় পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় চলে আসবে।
তিনি বলেন, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ২৫ শতাংশ বাড়লেও আমাদের স্থানীয় বাজারে ২ থেকে ৪ শতাংশের বেশি দাম বাড়েনি। গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েলের দাম ১১ থেকে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলেও আমাদের আমদানিকারক এবং মিল-মালিকদের সহযোগিতায় ১৬৩ টাকায় ১ লিটার এবং ১৪৯ টাকা খোলা বাজারে তেল বিক্রি করতে সমর্থ হয়েছি।
তিনি বলেন, সব জিনিসের দাম কমে গেছে। আপনারা যদি দেখেন সয়াবিন তেলের (লুজ) দাম প্রায় ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ প্রথম রমজান থেকে ১৮তম রমজানে এই কম্পিরিজনেই দাম দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত আছেন। যদিও তিনি ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে সেটা প্রকাশ করায় অনেক বিতর্কের শিকার হয়েছেন। আমরা সরু চাল, চিকন চাল এবং মোটা চাল এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এসে জাতভিত্তিক চালের নাম মিলার পর্যায়ে, পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি এবং খুচরা পর্যায়ে বিক্রির একটি রূপরেখা তৈরি হয়েছে'
তিনি বলেন, আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে এটা কার্যকর করে জানিয়ে দেব। আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে এটা কার্যকরী হবে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা বাজারদর সহনশীল পর্যায়ে রাখতে পেরেছি আশা করি আগামী ঈদ পর্যন্ত এটা ধরে রাখতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধি আছেন। আপনারা জানেন তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। কীভাবে যৌক্তিক মূল্যটা দীর্ঘসময় ধরে রাখতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে আছে। আপনারা অবহিত আছেন পরিবহণ তার মধ্যে অন্যতম একটা চ্যালেঞ্জ। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি আমাদের বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করছে।
টিটু বলেন, আমরা এনবিআর'র সঙ্গেও কথা হয়েছে আগামী বাজেটের আগেই এসেনসিয়াল কমোডিটি যেগুলো সেগুলো যেন সারা বছরের জন্য একটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। যাতে শেষ মুহূর্তে এসে আমাদের যেন পরিকল্পনার কারেকশন করতে না হয়। একইসঙ্গে আমাদের আমদানিকারক ও উৎপাদক আছে তাদের জন্য ১২ মাসের একটা পরিকল্পনা হলে সবার জন্য সুবিধা হয়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের যে অবস্থাই হোক আমাদের আগামী দুই থেকে তিন মাস অর্থাৎ কোরবানির ঈদ পর্যন্ত আমাদের পণ্যের সরবরাহ বিশেষ করে ভোজ্যতেল যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে বা সাপস্নাই চেইনে আছে। চিনি নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা নাই। চিনি নিয়ে সকল মিল-মালিক এবং পাইকারি বিক্রেতারা আশ্বস্ত করেছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েও কোনো সমস্যা হবে না।
গত বছরের আগস্টে ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সরকার ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করে। এরপর গত অক্টোবরে পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয় টনপ্রতি ৮০০ মার্কিন ডলার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে এসব পদক্ষেপ খুব বেশি কার্যকর না হওয়ায় গত ৭ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয়। ভারতের এ নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়ে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ওঠে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।
এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, বাংলাদেশকে ভারত ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ দেবে। অবশ্য ভারতের পেঁয়াজ না এলেও বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাতেই ধারাবাহিকভাবে কমছে পেঁয়াজের দাম। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা ছিল এখন সেই পেঁয়াজের কেজি ৫৫-৬০ টাকা।