এবার ট্রেনে পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়া যাবে যশোর
পরীক্ষামূলক ট্রেন চলল ভাঙ্গা-যশোর রুটে
প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর, ভাঙ্গা (ফরিদপুর) ও নড়াইল প্রতিনিধি
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত দুটি ট্রেনের 'ট্রায়াল রান' অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটের দিকে ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে একটি পণ্যবাহী ট্রেন সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছে। এই স্টেশনে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থানের পর ট্রেনটি ফের ভাঙ্গা অভিমুখে রওনা দেয়। একইভাবে দুপুর ১২টার দিকে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন ভাঙ্গা-যশোর রুটে যাত্রা করে। যশোর ঘুরে ভাঙা স্টেশনে ফিরে যায় ট্রেনটি। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভাঙ্গা-যশোর রুটে প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হয়েছে। একই রুটে রোববারও চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'চায়না রেলওয়ে গ্রম্নপ' (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের জুনে।
তথ্য অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে 'পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প' নামে এটির অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন নির্মিত হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে শনিবার ও রোববার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পরীক্ষামূলক ট্রেনের চালক
আব্দুল মান্নান বলেন, 'সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি। ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছি। পথে কোথাও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি।'
এদিকে, পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল খান বলেন, 'পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের বিপস্নব ঘটল। এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমেছে। সহজেই যাতায়াত করতে পারবো।'
এ বিষয়ে যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, 'এই ট্রেন যশোরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদের উপহার। পণ্যবাহী (পাথর) ট্রেনটি ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে যশোরে আসে। যাওয়ার সময় আরও বেশি বেগে গিয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের গতি ১০০-১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পরীক্ষা করা হবে। দুই দিনের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের পর আগামী জুন মাস নাগাদ এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।'
ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়ার দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। পরীক্ষামূলক ট্রেনের লোকো মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'এই যাত্রায় আমরা প্রথমে ২টি মালবাহী বগি এবং দুটি ইঞ্জিন নিয়ে যাত্রা শুরু করি। দুপুর ১২টায় ফিরে এসে আবার পাঁচটি যাত্রীবাহী বগি এবং দুটি ইঞ্জিন নিয়ে পুনরায় যশোরের রূপদিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।'
ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার সাকিবুর রহমান বলেন, 'সকাল ৮:৫৫ মিনিটে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি যশোরের রূপদিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে মালবাহী বগি নিয়ে রওনা দেয়। আবার ফিরে এসে পাঁচটি যাত্রীবাহী বগি নিয়ে ১২টার দিকে যাত্রা শুরু করে। শনিবার মোট চারবার পরীক্ষামূলক ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত যাতায়াত করে।