ঈদ বাজার

ক্রেতা সংকটে বেনারসি পলস্নী

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
দীর্ঘদিন ধরেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা পাচ্ছে না মিরপুর বেনারসি পলস্নী। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর এই সংকট প্রকট হয়েছে। যা এবার ঈদ বাজারেও অব্যাহত রয়েছে। যদিও বাঙালি নারীদের উৎসব উদযাপনের অন্যতম অনুসঙ্গ শাড়ি। তা যদি হয় ঈদ ও বৈশাখ; তাহলে তো কথাই নেই। শাড়ি থাকবেই সবার কেনাকাটার তালিকায়। কিন্তু উৎসবের দিন ঘনিয়ে আসলেও ক্রেতার দেখা নেই মিরপুর বেনারসি পলস্নীতে। শাড়ির জন্য দেশ ও দেশের বাইরেও ব্যাপক সুখ্যাতি থাকলেও ঈদ ও আসন্ন বৈশাখের বাজারে রীতিমতো ক্রেতা সংকটে মিরপুরের বেনারসি পলস্নী। যদিও দুই উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। শাড়িতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি চাহিদাসম্পন্ন বিদেশি পণ্যের আমদানি বাড়িয়েছেন তারা। ব্যবসায়ীদের ধারণা রমজানের শেষ দিকে কিছুটা বিক্রি বাড়তে পারে। তবে তা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো হবে না। অনেক বিক্রেতার মতে, বিক্রি এতই কম যে, রোজার ঈদের শাড়ি কোরবানির ঈদ পর্যন্ত বিক্রি করা হলেও শেষ হবে না। কেন বেনারসি পলস্নীর বিক্রি বা ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, বিভিন্ন শপিংমল ও ব্র্যান্ডের দোকানগুলো অন্যান্য পোশাকের পাশাপাশি শাড়িও রাখছেন। ৫ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে এমন দোকানের সংখ্যা ৩-৪ গুণ বেড়েছে। অনলাইনে সেলও আগের থেকে অনেক বেশি। এছাড়াও মিরপুরের বাইরের লোকজন বিয়ে ছাড়া অন্যান্য উৎসবে কেনাকাটায় এখানে কম আসেন। প্রতি বছরই ক্রেতার সংখ্যা কমছে। বর্তমানে মিরপুর বেনারসি পলস্নীতে প্রায় আড়াইশ দোকান রয়েছে। সরেজমিন এসব দোকানে তেমন কোনো ক্রেতা দেখা যায়নি। বিকালে কিছু ক্রেতা আসলেও সকালেও কোনো ক্রেতা পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তবে এর পার্শ্ববর্তী মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বরে মার্কেট ও শাড়ির দোকানগুলো ছিল রীতিমতো ক্রেতায় ঠাসা। বেনারসি পলস্নীর বিক্রেতারা বলছেন, 'এমন অবস্থা আগে কখনো হয়নি। এমনকি করোনাকালেও দোকানে কম হলেও কাস্টমার ছিল।' বেনারসি পলস্নীর মধ্যে 'বেনারনী কুঠির'-এর ৪টি দোকান রয়েছে। দোকানে ম্যানেজার কাওসার হোসেন বলের, 'গত ৩৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম ক্রেতার খরা দেখছি। যদিও আমাদের বিয়ের মৌসুমে বিক্রি সবচেয়ে ভালো তবে সারা বছরই ক্রেতা পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ঈদ ও বৈশাখে কোনো দিন ক্রেতার সংকট হয়নি।' ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এখানকার প্রায় সব দোকানেই ১০ রমজানের পরই নতুন পণ্য উঠানো হয়েছে। মিরপুরের ঐতিহ্য বেনারসি ও কাতান ছাড়াও ভারতীয় শিল্ক, কাতান, সুতি, জর্জেট, খাড্ডি ও জামদানি শাড়ির বৈচিত্র্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও ক্রেতা সক্ষমতা বিবেচনায় বিভিন্ন দামে জামদানি ও মসলিন শাড়ির সংগ্রহ রয়েছে। শুধু তাই নয় ভারত বাংলাদেশে পার্টি ট্রেন্ড মাথায় রেখে সিল্ক, জর্জেট, অরেঞ্জা, সামুসি সিল্কসহ নেটের শাড়িরও তুলেছেন দোকানিরা। ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা দামের শাড়িও রয়েছে অধিকাংশ দোকানে। কিন্তু এত আয়োজনের পরও ক্রেতা পাচ্ছে না বেনারসি পলস্নী। অথচ এখান থেকেই হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৪ শাড়ি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে বিক্রি রয়েছে বলেই এখনও বেনারসি পলস্নীর ঐতিহ্য টিকে রয়েছে। কারখানাগুলো চলছে বলে শিল্পটাও বেঁচে আছে। কাওসার হোসেন বলেন, দিনে অন্তত ৪ লাখ টাকার সেল হলে দোকান ও ব্যবসা পরিচালন ব্যয় মেটানো যায়। গত বছর ঈদের কোনো কোনো দিন প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা হয়েছে। তবে এবার দিনে ১ লাখ টাকার বিক্রিও নেই। আর বেশিরভাগ ক্রেতাই ৩-৫ হাজার টাকার মধ্যে শাড়ি কেনেন। ফলে ক্রেতা না বাড়লে ব্যবসা টেকানো সম্ভব হবে না। বিক্রেতাদের তথ্যানুযায়ী, এখানে যে জামদানি ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যায় তা রাজধানীর যে কোনো দোকান থেকে ৪-৫ হাজার টাকায় ক্রেতা কিনছেন। একইভাবে এখানকার কাতান ও সিল্কের ক্ষেত্রে তাই ঘটছে। মূলত বিয়ের মৌসুমে বেনারসি বিক্রি হয় এর বাইরে পার্টি আইটেম ও জামদানি শাড়ির বিক্রি বেশি। এগুলো অন্যান্য মার্কেট থেকে ২০ শতাংশ কম দামে এখানে বিক্রি হয়। তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। মিরপুরের বাসিন্দা রাজিয়া আফরিন বলেন, 'আমি মায়ের সুতি এবং নিজের জন্য জামদানি শাড়ি কিনতে এসেছিলাম। এর আগেও অনেকবার এখান থেকে শাড়ি কিনেছি। কিন্তু দাম চাওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। দু-একটি দোকানে ফিক্সড প্রাইস থাকলেও বেশিরভাগ দোকানেই নেই। শাড়ির দাম সম্পর্কে কারও ধারণা না থাকলে এখানে গলাকাটা দাম নেওয়া হয়। এটাই এখানে না আসার অন্যতম কারণ'। ক্রেতারা বলছেন, ব্র্যান্ডের দোকান বা শপিংমলে ফিক্সড প্রাইস থাকার কারণে ক্রেতা সহজেই নিজের বাজেট অনুযায়ী শাড়িটি কিনতে পারে। এছাড়াও শাড়ি ডিসপেস্ন এমনভাবে করা থাকে যেখানে ক্রেতা নিজের হাতে শাড়িটি ধরে বা নেড়ে-চেড়ে দেখতে পারে। কিন্তু এখানে বেশিরভাগ শাড়িই ভাঁজ করা থাকে শুধু কালারটা দেখা যায়। বিক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী দাম শাড়ি দেখান ও দাম হাঁকান। যা সময় সাপেক্ষ। তাই হাজার টাকা বেশি হলেও এই ঝামেলা এড়াতে চান বেশিরভাগ ক্রেতা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিক্রেতারা বলছেন, এখন অনলাইনের কারণে সবাই শাড়ির দাম জানে। তাই বাড়তি দাম নেওয়ার সুযোগ কম। তবে এবার শাড়ির দাম একটু বেড়েছে। কারণ সুতা ও অন্যান্য মেটারিয়ালের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে সিল্ক শাড়িতে। আগে এক কেজি সিল্ক সুতো ১৮০০ টাকা কেনা গেলেও এখন দাম প্রায় ৩৫০০ টাকা। আর দেশীয় সিল্ক সুতা দিয়ে কাতান বোনা যায় না। ফিক্সড প্রাইসের ক্ষেত্রে রয়েছে দোকানিদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা জানান, ফিক্স প্রাইস কয়েকবার কারার চেষ্টা করা হয়েছে তখন ক্রেতারা ভালোভাবে নেয়নি। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক বিক্রেতা জানিয়েছেন কিছু শাড়ির ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায় কিন্তু শাড়ির বৈচিত্র্য ও সংখ্যা ও দোকানের স্পেসের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।