ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। কিন্তু নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়ক-জুড়ে এখন ধুলার রাজত্ব। আগামী ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যানবাহনের চাপ বাড়ায় দিন-রাত ধুলার কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে গোটা এলাকা। এতে এলাকাবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি-কাশি, মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে।
সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কটির দৈর্ঘ্য ৫১ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন পেলেও এর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।
ঈদুল ফিতরের আগে ওই সড়কের এক পাশের দুই লেনের ২৭ কিলোমিটার অংশ যান চলাচালের জন্য পুরোপুরি
খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কিছু অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। ২৭ কিলোমিটার অংশ খুলে দিলেও এর মধ্যে দুই-তিন কিলোমিটার অংশে যাত্রীদের ভোগান্তি হবে। তবে সেই ভোগান্তি লাঘবেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আশুগঞ্জ নৌবন্দর-বিশ্বরোড-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত হচ্ছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে ধরখার পর্যন্ত সড়কের বেশির ভাগ অংশে দুই লেনের কাজ শেষ হয়েছে। আর যেসব অংশ শেষ হয়নি সেখানে যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বেতবাড়িয়া, সুহিলপুর, ঘাটুরা, কাউতলী, রামরাইল, রাধিকা, সুলতানপুর, পঞ্চবটি, আহরন্দ, মহিউদ্দিননগর এলাকায় পুরনো সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উজানিসার থেকে আহরন্দ পর্যন্ত। এছাড়া ওই সড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দের পাশাপাশি ধুলার যন্ত্রণায় চালক ও যাত্রীরা অতিষ্ঠ। ধুলায় মহাসড়কে কুয়াশার মতো পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা ধুলাবালির কারণে অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন।
সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, 'উন্নয়ন কাজ হবে ভালো কথা, তবে এত দীর্ঘ সময় ধরে কেন? আমরা এই ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আমাদের এলাকার মানুষ ধুলার কারণে জ্বর, সর্দি এমনি শ্বাস-নিঃশ্বাসের সমস্যায় ভুগছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।'
শহরের পাইকপাড়ার বাসিন্দা ঝটিন সাহা জানান, তিনি প্রতিদিন অফিসের কাজে মোটর সাইকেলে যাতায়াত করেন। এই রাস্তাকে তার কাছে ধুলার রাজ্য মনে হয়। ধুলাবালির কারণে জ্বর, কাশি প্রায় সময়ই লেগে থাকে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'এই কষ্ট থেকে আমরা মুক্তি চাই।'
অটোরিকশা চালক রাজিব রহমান বলেন, 'জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি। যেমন সড়ক খারাপ, তেমনি ধুলার জন্য কষ্ট গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনিভাবে সড়কের আশপাশের বাসিন্দাদেরও ভোগান্তির শেষ নেই।'
সিলেটগামী বিআরটিসি বাসের চালক মো. কবির হোসেন বলেন, 'রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ফোর লেন কাজের জন্য রাস্তায় ধুলা ওড়ে। ভাঙা রাস্তা ও ধুলার জন্য গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। সময়ও লাগে অনেক বেশি।'
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সড়কটি এখন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আওতায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ভালো বলতে পারবেন।'
চার লেন সড়কের উপ-প্রকল্প পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, 'যেসব জায়গা কার্পেটিং করা হয়েছে সে সব জায়গায় ধুলা নেই। কার্পেটিং না হওয়া স্থানে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ধুলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঠিকাদারকে বলে দেয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে। রামরাইল এলাকায় পুরনো সড়কে যেখানে বেশি ভাঙা সেটির একপাশে নতুন সড়কের এক অংশ হয়ে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। বিশ্বরোডের কাছে নতুন সড়কের একাংশের যেটুকু বাকি আছে সেটিরও পিচ ঢালাই কাজ দু'একদিনের মধ্যে শুরু করলে ঈদের আগে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। তবে আহরন্দ এলাকায় যে এক দুই কিলোমিটার অংশ খারাপ অবস্থায় আছে সেটিতে কিছু ভোগান্তি হবে।'