ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার

পদ্মা সেতু দিয়ে যশোরের পথে ছুটবে দ্রম্নতগতির ট্রেন

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
পদ্মা সেতু নিয়ে আরও একটি স্বপ্ন পূরণের একধাপ দূরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথে রাজধানীতে পৌঁছানোর যশোরবাসীর স্বপ্ন এখন হাতছোঁয়া দূরত্বে। সড়কপথের পর এবার ট্রেনে সহজে ঢাকায় যাবার আরও একধাপ অগ্রগতি হলো। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত আজ ও আগামীকাল রোববার দুটি ট্রায়াল রান হবে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর-ঢাকার রেল যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চায়না রেলওয়ে গ্রম্নপ লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মহিদুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত ট্রায়াল রানের সম্ভাব্য সময় ভাঙ্গা থেকে সকাল ৯টা নাগাদ রওনা দেবে। ৮৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার পথ কোনোরকম বিরতি ছাড়াই ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে রূপদিয়া পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানে কিছুটা সময় পর্যালোচনার পর দুপুর নাগাদ ফের ট্রেনটি ভাঙ্গায় ফিরে যাবে। রোববারও একই শিডিউল থাকবে। নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৯৩ কিলোমিটার। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ব্রডগেজ রেললাইন দিয়ে ছুটবে ট্রেন। রূপদিয়া থেকে ট্রেনের কোনোটির গতিপথ যশোর হয়ে বেনাপোল আবার কোনোটি খুলনা অভিমুখে হবে। ঢাকা-ভাঙ্গা হয়ে খুলনা, যশোর ও বেনাপোল রুটে বর্তমানে ট্রেন চলাচল চালু আছে। এতে দূরত্ব কমেছে তিন ঘণ্টার মতো। আর রূপদিয়া থেকে সরাসরি রেল সংযোগ চালু হলে ট্রেন আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছাবে। সড়কপথে যশোর থেকে ঢাকায় সময় লাগে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টা যা আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক সময়। রেলপথটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এবং নড়াইলের ওপর দিয়ে যশোর গিয়ে শেষ হবে। চলমান রেললিংক প্রকল্প শেষ হলে যশোর থেকে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া সম্ভব হবে। এতে পরিবেশবান্ধব ও অধিকতর নিরাপদ ট্রেনযাত্রায় মানুষের চলাচলের গতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। এজন্য রাত-দিন যথাসম্ভব বেশি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছেন এই বঙ্গের সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে যশোর কার্যালয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস বলেন, পদ্মা সেতুর সাথে মূল লাইনের সংযোগ দেওয়ার সময় আমরা যুক্ত ছিলাম। সংযোগের পর পুরোটাই এখন পর্যন্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দেখছেন। আমরা এখনো অপারেশনাল দায়িত্বে যুক্ত হইনি। চায়না রেলওয়ে গ্রম্নপ লিমিটেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মহিদুল ইসলাম বলেন, 'পদ্মা রেললিংক প্রজেক্টের ডিভিশন টু ইউনিট ফাইভের তিনটি রেল স্টেশনের মধ্যে রূপদিয়া ও পদ্মবিলা স্টেশনের রেল ট্র্যাকের কাজ শেষ হয়েছে। সিঙ্গিয়া স্টেশনের কাজও শেষ হওয়ার কাছাকাছি। তবে স্টেশনের কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ১৫ এপ্রিল প্রকল্পের মেয়াদ হবে। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।' তিনি আরও জানান, ট্রায়াল রানে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা, চায়না রেলওয়ে গ্রম্নপ লিমিটেডের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটির সেফটি অফিসার মো. নাঈম কাজী জানান, জুনে নির্ধারিত থাকলেও এর আগেই নতুন রুটে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও শিল্পাঞ্চল খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে বদলে যাবে এ এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থাও। চায়না রেলওয়ে গ্রম্নপ লিমিটেডের তথ্য মতে, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণে ৪১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যার মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে চীন। বাংলাদেশের বিনিয়োগ ২০ হাজার কোটি টাকা। যশোর পর্যন্ত নতুন রুটে রয়েছে মধুমতি, চিত্রা, তুলারামপুর, আফরাসহ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ছোটবড় ৩২টি রেল সেতু, ৮৬টি কালভার্ট, ৮২টি আন্ডারপাস। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই হচ্ছে আধুনিক ও নতুন। পুরনো ছয়টি স্টেশনকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে। মাওয়া, কাশিয়ানি, রূপদিয়া, পদ্মবিলা স্টেশনে অপারেশনাল সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। কাজ তদারকি করছে সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকল্পটির গুণগতমান সঠিক রেখে দ্রম্নত বাস্তবায়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ গতবছরের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতু অতিক্রম করে চালু হওয়া ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রুটে নিয়মিত চলাচল করছে ট্রেন। আর যশোর পর্যন্ত নতুন রুট চালুর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকা-যশোর রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি সম্পন্ন হলে শুধু দূরত্বই নয়, ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দ্রম্নতগতির এই রেল নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ রেল বিশেষ উচ্চতায় আসীন হবে। পদ্মা সেতুর সুফল আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। একইসাথে বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ রেলপথ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।