মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কুড়িগ্রামের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল

সমীক্ষা শেষে শিগগিরই শুরু হচ্ছে কাজ

অবকাঠামো ও আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে নিজ দেশে ফিরলেন ভুটান রাজা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
  ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
সমীক্ষা শেষে শিগগিরই শুরু হচ্ছে কাজ

বাণিজ্য সম্ভাবনা ও পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়াতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে হতে যাচ্ছে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও দুই দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা দেখার জন্য ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক কুড়িগ্রাম সফর করেছেন। এ সময় তিনি প্রস্তাবিত এলাকায় শিল্প স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়ে দু'দেশের যৌথ সমীক্ষার পর শিগগিরই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন। এজন্য একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাবেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের ধরলা নদীর পূর্ব পাড়ে মাধবরাম এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন তিনি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরীফ প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধা সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন। জবাবে রাজা দ্রম্নত সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এই এলাকায় শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক জনসভায় পিছিয়েপড়া কুড়িগ্রামে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। গত বছর ১৩৩ একর খাস জমি বেজা'র কাছে হস্তান্তর করে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন। আরও ৮৬ একর জমির অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক বিবেচনায় ভুটান এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায়।

ভুটানের রাজা বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর, এরপর সড়ক পথে কুড়িগ্রামে আসেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সোনাহাট স্থলবন্দরে বিজিবি'র পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার শেষে তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের গোলকগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভুটান চলে গেছেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, নৌপরিবহণ মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিপস্নব হাসান পলাশ, জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ অথনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের জানান, ভুটানের রাজা প্রস্তাবিত এলাকায় শিল্প স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছেন। দু'দেশের যৌথ সমীক্ষা শেষে দ্রম্নত এই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভুটানের রাজা শীঘ্রই একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠাবেন। কাজ শুরু হলে তিনি আবার কুড়িগ্রামে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

ইউসুফ হারুন আরও জানান, 'রাজা বলেছেন- এই এলাকার মানুষের কী ধরনের চাহিদা, কী ধরনের শিল্প স্থাপন করলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ ব্যাপারে সমীক্ষা পরিচালনা করে দ্রম্নত তা ভুটানকে জানিয়ে দেওয়া হবে।'

তিনি আরও জানান, '২০২৩ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের রাজার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এই বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা, বেজার মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে সরকার কিছু ইনসেন্টিভ দেয়, ভুটান থেকে শিল্পের কাঁচামাল এনে শিল্পায়ন অনেক লাভজনক হবে, এসব বিবেচনায় তারা এগিয়ে এসেছেন।'

এদিকে রাজার আগমন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভুটানের বিনিয়োগের খবরে উচ্ছ্বসিত কুড়িগ্রামের ধরলা পাড়ের মানুষ। তারা মনে করেন শিল্পকারখানাবিহীন অনগ্রসর কুড়িগ্রামকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের রাজার বিশেষ আগ্রহে এখানে দ্রম্নতই শিল্পকারখানা স্থাপন হবে। কর্মসংস্থান হবে অনেক বেকারের।

স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা মনে করে, ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে এই এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর। কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানে ভুটানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে