স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস পাওয়ার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। চার দফা দাবি আদায়ে রাজধানীসহ সারা দেশে আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা। তবে কর্মবিরতি নিলেও এক মাসের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল না পেলে ফের রাজপথে নামার ঘোষণা দেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, আমাদের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি বহু দিনের। বর্তমান বাজারে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়েছে সেক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি না হলে তাদের সংসার এবং দৈনন্দিন জীবনযাপন করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়বে। ফলে তাদের দাবির সঙ্গে প্রথম দিন থেকেই একাত্মতা ঘোষণা করেছি। কারণ এটি যৌক্তিক দাবি। ফলে তাদের সঙ্গে কয়েকবার বসেছি। তারা অনেক পরিশ্রম করেন এবং রোগীর সেবা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালকে তারাই বাঁচিয়ে রাখেন। তারাই সুনাম বয়ে নিয়ে আসেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, তাদের বেতন বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে আমরা বিশদ আলোচনা করেছি। সংক্ষিপ্তভাবে যদি বলি, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে জানানোর পর তিনি বিষয়টি দেখবেন জানিয়েছেন এবং তাদের কাজে যোগ দিতে বলেছেন। প্রথমে তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং পর্যায়ক্রমে তাদের অন্য দাবিগুলোর বিষয়েও ভেবে দেখবেন। আমি এ সংক্রান্ত কাগজও দিয়ে এসেছি। তবে তিনি আরও মাসখানেক সময় চেয়েছেন। ফলে ঈদের পর বলতে পারব কীভাবে তাদের বেতন বৃদ্ধি হবে।
এর আগে দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, অধ্যক্ষ, পরিচালকসহ পেশাজীবী চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতারা অংশ নেন। তারা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ৩০ হাজার টাকা এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের (এফসিপিএস, রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট) বকেয়া ভাতা দিতে হবে। ১২টি প্রাইভেট ইনস্টিটিউটের নন-রেসিডেন্ট ও রেসিডেন্টদের আকস্মিক ভাতা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পাশাপাশি পুনর্বহাল করতে হবে। অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
এ দিন এসব দাবিতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মবিরতি করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। মধ্যস্তরের চিকিৎসকেরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্য চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টা হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি ও অর্থোপেডিক ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোনো শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নেই। সেবা পেতে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি। অনেক রোগীকে মেঝেয় রাখা হয়েছে।
মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন জানান, গত মঙ্গলবার রোগীকে ভর্তি করেছেন। দিনের বেলা সকালে চিকিৎসক আসেন। দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত নার্সরাই একমাত্র ভরসা।