আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনায় সামিট পাওয়ার লিমিটেডের তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছে সরকার। বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মেয়াদ বৃদ্ধির এই প্রস্তাব অনুমোদন হয়। এদিন আরও দুটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন হয়। সব মিলিয়ে এতে মোট ব্যয় হবে ৬৭৯ কোটি ৮৭ লাখ ৬৭ হাজার ১৫১ টাকা।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনায় ১০ (+১০%) মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক ৩টি বিদু্যৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ৩টি বিদু্যৎকেন্দ্রের স্পন্সর কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট তারিখ উত্তীর্ণ হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে আরও ৫ বছর বৃদ্ধি করা হয় যার মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট উত্তীর্ণ হয়। নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদু্যৎ সরবরাহের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বার আরও ৫ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বাপবিউবো সুপারিশ করে। বাপবিবো এবং নেগোসিয়েশন কমিটি কর্তৃক স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করে ৩টি গ্যাস ভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ৫ বছর বৃদ্ধির জন্য সামিট পাওয়ার লিমিডেটের সঙ্গে ট্যারিফ কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫.৮২ টাকা হিসেবে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বর্ধিত মেয়াদে (৫ বছরে) স্পন্সর কোম্পানিকে ৫৪৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। বর্ণিত প্রস্তাবে ট্যারিফ আগের তুলনায় হ্রাস পাওয়ায় বর্ধিত মেয়াদে প্রায় ৬.৮১ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে।
বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো : 'ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন' প্রকল্পের আওতায় সিপিসি ঠিকাদারের সঙ্গে পঞ্চম সাপিস্নমেন্ট চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে ১টি স্বয়ংসম্পূর্ণ ট্যাংক ফার্ম ও গভীর সমুদ্রে ১টি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুংরিং এবং ১১০ কিলোমিটার দুটি ডাবল পাইপলাইন স্থাপনের জন্য চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন বু্যরোর (সিপিপিবি) সঙ্গে ৪টি সাপিস্নমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে সিপিপি কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন ও পিপিসি'র সুপারিশ মোতাবেক টেস্টিং ও কমিশনিং কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে যথাযথ শক্তির টাগবোট সংগ্রহ, পাইলটেজ এবং আনুষঙ্গিক সার্ভিস অন্তর্ভুক্তির জন্য চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কো. লি. এর সঙ্গে পঞ্চম সাপিস্নমেন্টারি অ্যাগ্রিমেন্ট বাবদ ৫.৭০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬২ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকায় চুক্তির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
এছাড়া 'খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)' প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডবিস্নউডি-১ এর পূর্ত কাজের তৃতীয় ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডবিস্নউডি-১১ এর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে ভারতের মেসার্স ইরকন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ৫২ হাজার ৯০৭ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি হওয়ায় তৃতীয় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৭০ কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার ১৫১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে ভারতের ন্যাশনাল কোঅপারিটিভ এক্সপোর্র্টস লিমিটেডের কাছ থেকে টিসিবির মাধ্যমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির একটি প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ট্রেড কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ভারতের ন্যাশনাল করপোরেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের কাছ থেকে এই পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। সরকারই এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঠিক করে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২ মার্চ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) নারী উদ্যোক্তাদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছিলেন, চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসবে। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আহসানুল ইসলাম আরও জানিয়েছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিস্নউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের সময় ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। সেখানে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ পাঠানোর বিষয়ে চিঠি ইসু্য করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।