পপুলার লাইফ ইন্সু্যরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান হত্যা মামলা
আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া নিয়ে রহস্য
'আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে'
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
পপুলার লাইফ ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আট আসামির কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এ নিয়ে বাদীপক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেষ্ট তৎপরতা না থাকারও অভিযোগ তোলা হয়েছে বাদীপক্ষের তরফ থেকে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টার কোনো কমতি নেই।
পল্টন থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাসান আহমেদ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাতুল ফেরদৌসের বোন রুনা লায়লা ও রুনা লায়লার স্বামী এরশাদ, স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের বোন চাঁদনী নূর ও চাঁদনীর স্বামী মেহমুদ রেজা, স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীর ভাই সাহিম ফারুক ও শাহরুখ খান সাজিদ এবং নিহত হাসান আহমেদের শাশুড়ি পারভীন অকিলের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পরোয়ানা জারির পর থেকেই আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। চলতি বছরের ২২ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে পল্টন থানা পুলিশকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করার নির্দেশ দেন বিচারক।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পল্টন মডেল থানার ওসি মনির হোসেন মোলস্না যায়যায়দিনকে বলেন, আসামিরা সবাই পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আসামিরা যাতে পালিয়ে বিদেশ যেতে না পারেন, এজন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ছবি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সারাদেশে ওয়্যারলেস ম্যাসেজও পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই। তবে সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ আসামিদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ যায়যায়দিনকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
র্
যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, যে কোনো ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের্ যাব সব সময়ই সচেষ্ট থাকে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিসহ অন্য কৌশলী তৎপরতা।
মামলার বাদী কবির আহমেদ আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওয়ারেন্ট জারির অনেক দিন পরও আসামিদের গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রম্নত আদালতে সোপর্দ করে বিচারকের আদেশ মান্য করা।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার পর ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন হাসান আহমেদ (৫৭)। ভর্তি হন ঢাকার পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে। ওই বছরের ১১ অক্টোবর তাকে হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয় ঢাকার পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডের রূপায়ণ তাজ ভবনের লিফটের ১৪ তলার নিজ বাসায়। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (বারডেম) নেওয়ার পর তার মৃতু্য হয়।
পুলিশ আরও জানায়, হাসান আহমেদের মৃতু্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নিহতের ছোটভাই কবির আহমেদ। কবির আহমেদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরদিন কবির আহমেদ ঢাকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি নথিভুক্ত করে পল্টন মডেল থানা পুলিশ। পল্টন থানা পুলিশ মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দিলে বাদী নারাজি আবেদন করেন। আদালত মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আব্দুল হক জানান, হাসান আহমেদকে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চিকিৎসা শেষ না করেই বাসায় নেয় তার পরিবার। ভাই-বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় হাসান আহমেদের। এ সময় কৌশলে হাসান আহমেদের ব্যাংকে থাকা কোটি কোটি টাকা ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি স্ত্রী তার নিজের নামে ট্রান্সফার করে নেন। এরপর শুরু হয় হাসান আহমেদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, সূদুরপ্রসারি হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাসান আহমেদকে দিনের পরদিন ইনসুলিন দেননি তার স্ত্রীসহ অন্য আসামিরা। যাতে হাসান আহমেদের মৃতু্য নিশ্চিত হয়। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর মামলার আট আসামির বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।