আসন্ন ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে চাহিদা বেড়েছে। সোমবার দ্বিতীয় দিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট। সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন ঘণ্টায় পশ্চিমাঞ্চলের নির্ধারিত প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় দিন বিক্রি করা হয় ৪ এপ্রিলের টিকিট। বেলা ২টায় পূর্বাঞ্চলের টিকিটও অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়।
এদিকে, প্রতিবছরের মতো রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় সামলাতে এবং বিনাটিকিটের যাত্রী ঠেকাতে কমলাপুর স্টেশনসহ ঢাকার ৪ স্টেশনে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'সকাল ১১টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনের ১৪ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ অঞ্চলের মোট আসন সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট প্রিন্ট করা হচ্ছে না। এবারে প্রথম ওটিপি সিস্টেম চালু করা হয়েছে টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে।'
তিনি জানান, আগের ঈদগুলোতে ৫ দিনের টিকিট বিক্রি করলেও এবারই প্রথম ৭ দিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে রেলওয়ে। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের এই ট্রেন যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে ২৪ মার্চ রোববার থেকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে আজ ২৬ মার্চ। এ ছাড়া ৬ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৭ মার্চ; ৭ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৮ মার্চ; ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ২৯ মার্চ এবং ৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ৩০ মার্চ। যাত্রী সাধারণের অনুরোধে ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে।
ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৩ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট মিলবে।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, 'সোমবার টিকিটের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। আগামী ৪ তারিখ বৃহস্পতিবার এবং ৫, ৬ সাপ্তাহিক ছুটি। সেজন্য ঈদের আগেই অনেকে বাড়ি চলে যাবেন। তাই ৪ তারিখের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা।'
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টায় রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ার শ্রেণির ৬টি আসন 'অ্যাভেইলেবল' দেখাচ্ছিল। তবে ওই টিকিট কেনার জন্য পরের ধাপে গিয়ে দেখা গেছে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
ওই সময় পর্যন্ত সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার একটি, শোভন চেয়ারের তিনটি আসন ফাঁকা দেখায়। তবে পরের ধাপে গিয়ে দেখা যায় সেগুলোও বিক্রি হয়ে গেছে।
সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মধুমতী এক্সপ্রেসের স্নিগ্ধা শ্রেণির তিনটি, শোভন চেয়ার শ্রেণির একটি এবং পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ার শ্রেণির দশটি আসন 'অ্যাভেইলেবল' দেখাচ্ছিল। তবে টিকিট কেনার জন্য পরের ধাপে গিয়ে ওইসব টিকিটও আর পাওয়া যায়নি।
ওয়েবসাইেট গিয়ে দেখা গেছে, সাড়ে ৮টার মধ্যেই রংপুর এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে নীলসাগর এক্সপ্রেস এবং লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের ক্ষেত্রেও।
খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি সিট শ্রেণির দুটি, শোভন চেয়ার শ্রেণির ছয়টি এবং স্নিগ্ধা শ্রেণির চারটি টিকিট অবিক্রীত দেখাচ্ছিল সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে 'বুক নাউ' অপশনে গিয়ে টিকিট কাটতে গেলে দেখা যায় সেগুলোও বিক্রি হয়ে গেছে।
ওই সময় পর্যন্ত খুলনার চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা শ্রেণির তিনটি, শোভন চেয়ার শ্রেণির ২৬টি আসন 'অ্যাভেইলেবল' ছিল। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের কোনো টিকিট ছিল না বেলা সাড়ে ৮টায়।
ঈদের আগে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০টি টিকিট বিক্রি হবে। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ঢাকার ৪ স্টেশনে বাঁশের ব্যারিকেড
ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ আরামদায়ক যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ট্রেনকেই বেছে নেন। এতে বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় রেল কর্তৃপক্ষকে। এজন্য এবারও বিনা টিকিটের যাত্রীদের পস্ন্যাটফর্মে প্রবেশে বাধা এবং সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশের জন্য বাঁশের তৈরি ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ চারটি স্টেশনে।
সোমবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বাঁশের তৈরি পৃথক লাইন করা হয়েছে। যাতে এক লাইনের যাত্রী অন্য লাইনে প্রবেশ করতে না পরে। এ ছাড়া লাইনের প্রবেশ মুখে এবং পস্ন্যাটফর্মে প্রবেশের আগে তিন স্তরের টিকিট চেকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কমলাপুর ছাড়াও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন, বিমানবন্দর স্টেশন ও জয়দেবপুর জংশনেও একইভাবে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হচ্ছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, 'যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা স্টেশনের বাইরে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়েছি যাতে যাত্রীরা লাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে স্টেশনের পস্ন্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারেন। এ ছাড়া অন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি এবারের ঈদ যাত্রা আনন্দদায়ক হবে।'
আগামী ৩ এপ্রিল ভোর ৬টায় রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ট্রেনে ঈদযাত্রা। ঈদ স্পেশাল ট্রেনসহ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনের মোট আসন ৩৩ হাজার ৫০০টি। গতবারের চেয়ে এবার আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ হাজার ৭২২টি।