শেখ হাসিনা-ওয়াংচুক বৈঠক
বাংলাদেশ করে দেবে বার্ন ইউনিট অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে ভুটান
দুই দেশের মধ্যে তিন সমঝোতা স্মারক সই
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া নবায়ন করা হয়েছে পুরনো একটি চুক্তি। এসব সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশ। ভুটানের জন্য কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। দুই দেশের মধ্যে ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করা হবে। এছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আগে যে চুক্তি রয়েছে সেটি ফের নবায়ন করেছে দুই দেশ।
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের বৈঠক শেষে এসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বেলা সোয়া ১টার দিকে ভুটানের রাজা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে টাইগার গেটে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের রাজা। একান্ত বৈঠক শেষে তারা দুই দেশের প্রতিনিধি দল নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে সোমবার সকালে ঢাকা পৌঁছান ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং রানি জেৎসুন পেমা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিমানবন্দরে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, 'দুই দেশের সমঝোতার আওতায় থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন হবে। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।'
কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে ১৯০ একর জমি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হবে।
প্রতি বছর ভুটানের ফরেন সার্ভিস অফিসারদের জন্য বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য দুটি আসন বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দেবে।
বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিলে ভুটানের কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে ৩ বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার হিসেবে দেবে বাংলাদেশ।
জলবিদু্যৎ আমদানি চুক্তি
এদিকে সোমবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'ভুটান থেকে আমরা জলবিদু্যৎ আমদানি করতে চাইছি। আমরা ইতোমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদু্যৎ আমদানির জন্য চুক্তি সই করেছি এবং ভারতও আমাদের সহায়তা করেছে। ভুটান থেকে আমদানির সময়ও ভারত আমাদের সহায়তা করবে।'
খুব শিগগিরই ভুটানের সঙ্গে এই চুক্তি সই হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'জলবিদু্যৎ আমদানিতে ভুটানের সঙ্গে এবার চুক্তি সই হবে না। আরও কিছু কাজ বাকি আছে। তবে আমরা আশা করছি, এটি খুব শিগগিরই হবে।'
হাছান মাহমুদ বলেন, 'যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) আবার যুক্ত হোক, এ জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আমি তাদের বিবিআইএন-এ আবার যোগ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এনেছি। ভুটানের রাজা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে শুনেছেন।'
মন্ত্রী জানান, ভুটানে বিমান ফ্লাইট সপ্তাহে মাত্র দুটি, এটি বাড়ানোর বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। তবে ভুটানে বাংলাদেশিদের ট্রাভেল ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
রাজাকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন ঘুরিয়ে
দেখালেন শেখ রেহানা ও পুতুল
অন্যদিকে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসা ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানি জেৎসুন পেমা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ভুটানের রাজা ও রানিকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা এবং নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভুটানের রাজা। এরপর তিনি জাদুঘর ঘুরে দেখেন এবং স্মারক বইয়ে সই করেন। এ সময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
রাজার সফরসূচি
আজ মহান স্বাধীনতা দিবসের ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন ভুটানের রাজা। পরে তিনি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন। বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বুধবার পদ্মা সেতু পরিদর্শনে যাবেন ভুটানের রাজা। এরপর বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে।
কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করতে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বিমানে ঢাকা ত্যাগ করবেন ভুটানের রাজা। কুড়িগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকালে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। সেখানে গার্ড অব অনার দেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিদায় জানাবেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।