কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকান্ড
শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে
প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ঢাকার মহাখালীর কড়াইল এলাকার গোডাউন বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত দুই শতাধিক ঘর। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বৈদু্যতিক শর্টসার্কিট বা চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। রোববার বিকাল ৪টার দিকে রাজধানী ঢাকার কড়াইলের গোডাউন বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ সময় বস্তির বাসিন্দারা আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকেন। বস্তির বাসিন্দা ও স্থানীয়রা বাটি, বালতি, ড্রামসহ ঘরের নানা জিনিসপত্র দিয়ে গুলশান লেক থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু চোখের পলকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় বস্তির বাসিন্দারা বস্তি ঘরে জিনিসপত্র রেখেই প্রাণে বাঁচতে যে যার যার মতো নিরাপদ জায়গায় ছুটতে থাকেন। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোডাউন বস্তির পুরো এলাকায়। বিশাল কড়াইল বস্তির একেক অংশ একেক নামে পরিচিত। বস্তির যে অংশটিতে আগুন লাগে সেটি গোডাউন বস্তি হিসেবে পরিচিত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বারিধারা, তেজগাঁও, কুর্মিটোলা, সিদ্দিক বাজার, মিরপুর ও উত্তরা ফায়ার স্টেশনের ৬টি ইউনিট তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যায়। ইউনিটগুলো কাজ শুরু করে। ততক্ষণে আগুনের ভয়াবহতা আরও বেড়ে যাওয়ায় আরও ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। মোট ১০টি ইউনিট দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে বস্তিটির কাঁচা-পাকা অর্ধ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বৈদু্যতিক শর্টসার্কিট কিংবা চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। এদিকে বস্তিতে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বিদু্যৎ ও তিতাস কর্তৃপক্ষের লোকজন। তারা পুরো এলাকার বিদু্যৎ ও গ্যাসের সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। আগুন নির্বাপণ শেষ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুরো এলাকায় আবার বিদু্যৎ ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত দুই শতাধিক ঘর। প্রতিটি ঘরে গড়ে অন্তত ৪ জন মানুষ বাস করতেন। সে হিসেবে কয়েকশ' মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তারা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ আশপাশের পরিচিত কোনো বস্তির বাসিন্দাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সব হারিয়ে নিদারুণ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির বাসিন্দারা। ঈদের আগে এমন অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি রহস্যময় বলেও বস্তিবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, ঘটনার সময় অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন জায়গায় কাজে ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তেই অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। বস্তির বাসিন্দা রানা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, 'ঈদের আগে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার ঘরে টাকা ছিল। তাও পুড়ে গেছে। প্রায় ২০ হাজার টাকা পুড়ে যাওয়ায় আমি রীতিমতো দিশেহারা। আমি রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে জমা করতাম।' তিনি আরও জানান, 'শুধু আমি নই, বস্তির বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ঘরে নগদ টাকা রাখেন। তারা ঘরের ভেতরেই নগদ টাকা রাখেন। তাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তবে অনেকেই টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আবার অনেকেই ঘরের ভেতরে গর্ত করে রেখে দেন। কারণ তাদের বস্তিতে আগুন লেগে টাকা পুড়ে যাওয়ার অতীত অভিজ্ঞতা আছে। তবে বস্তির অধিকাংশ ঘরের মেঝে পাকা হওয়ায় বর্তমানে মাটি খুঁড়ে টাকার রাখা যাচ্ছে না। ফলে বস্তিঘরের কোনো গোপন জায়গায়ই টাকা রাখতে হয়। তার মতো অনেকেরই নগদ টাকা পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি বস্তিটিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত বহুবার মহাখালীর কড়াইল বস্তিসহ আশপাশের বস্তিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের পর খালি হয়ে পড়া জায়গা মুহূর্তেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বেদখল হয়ে যায়। এতে করে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে বস্তিটির আকার ও আয়তন। যদিও বস্তিটি সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে।