২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩-এ দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়েনি। এক বছরের ব্যবধানেও গড় আয়ু স্থিতিশীল রয়েছে। ২০২২ সালে গড় আয়ু ছিল ৭২.৩ বছর, ২০২৩ সালেও ৭২.৩ বছরই ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) এ তথ্য জানিয়েছে।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২৩-এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন- পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন।
আলমগীর হোসেন তার প্রবন্ধে পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে উঠে আসা উলেস্নখযোগ্য বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের বছর এই হার ছিল ৭২.৩ বছর, এবারও ৭২.৩ বছর আছে। জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার ১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০ শতাংশ। দেশে নির্ভরশীলতার অনুপাত ৫৩.৭ শতাংশ। পুরুষদের প্রথম বিবাহের ৪
গড় বয়স ২৪.২ বছর এবং নারীদের ১৮.৪ বছর। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পলস্নীতে আগমনের হার ২০.৪ এবং শহরে আগমনের হার ৪৩.৪। আন্তর্জাতিক অভিগমন প্রতি হাজারে ৬.৬১ জন থেকে উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৭৮ জন। আগমন/বহিরাগমন প্রতি হাজারে ২.৯৭ থেকে কমে হয়েছে ২.৩৭ জন।
বর্তমানে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজার ১৭১ জন জনসংখ্যা বসবাস করে। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল জন্মহার ১৯.৪ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১৯.৮ শতাংশ। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের হার ২০২২ সালে ৫৮.৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৩ সালে হয়েছে ৪৯.৩ শতাংশ এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে প্রসবের হার ২০২২ সালে ৪১.৪ শতাংশ থেকে উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ৫০.৭ শতাংশ।
প্রতি হাজার জনসংখ্যায় স্থূল মৃতু্যহার ৬.১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ৫.৮ শতাংশ। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃতু্যহার প্রতি হাজারে ৩৩ এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্ম শিশুর বিপরীতে মাতৃমৃতু্যর অনুপাত ১৩৬ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ১৫৩ জন। মৃতু্যর শীর্ষ ১০ কারণের প্রথম কারণ- হৃদ?যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃতু্যর হার ১.০২ শতাংশ এবং দ্বিতীয় কারণ- মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃতু্যর হার ০.৬৪ শতাংশ।
২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২২ সালের (৬৩.৩%) তুলনায় কিছুটা কমে ২০২৩ সালে হয়েছে ৬২.১ শতাংশ। জন্মনিয়ন্ত্রণের অপূর্ণ চাহিদা ২০২২ সালের (১৬.৬২%) তুলনায় কমে ২০২৩ সালে ১৫.৫৭ শতাংশ হয়েছে।
খানার আকার ২০২২ সালের ন্যায় ২০২৩ সালেও অপরিবর্তিত রয়েছে, যা ৪.২ জন। তবে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে নারী খানাপ্রধানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৭.৪ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৯ শতাংশ। অন্যদিকে, পুরুষ খানাপ্রধান ২০২২ সালে ছিল ৮২.৬ শতাংশ, যা ২০২৩-এ কমে হয়েছে ৮১.১ শতাংশ। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বিদু্যৎ সুবিধাভোগীর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৩ শতাংশে।
শিক্ষা, কর্মে কিংবা প্রশিক্ষণে নেই এমন তরুণের সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৪০.৬৭ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ৩৯.৮৮ শতাংশ হয়েছে। ৫ বছরের বেশি বয়সি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী জনসংখ্যার হার ২০২৩ সালে হয়েছে ৫৯.৯ শতাংশ। তবে, ১৫ বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এ হার ২০২২ সালের (৭৩.৮) তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৪.২ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৫ বছরের বেশি বয়সিদের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ৫০.১ শতাংশ।
দেশে পুরুষের তুলনায় নারী বেশি
দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। মোট ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ। পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ৩১ লাখ ৯০ হাজার বেশি।
সভায় জানানো হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর ভিত্তিতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার।
পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশে সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে দেশে নতুন করে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯ জন।