সোমালি জলদসু্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর নাবিকদের 'সহসা' উদ্ধারের বিষয়ে সরকার আশাবাদী বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, 'গতবার যখন এমভি জাহান মণি হাইজ্যাক হয়েছিল তাদের মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। এখন যতদ্রম্নত সম্ভব তাদের মুক্ত করার চেষ্টাই আমরা করছি। এখানে অবস্থানকারী নাবিক এবং জাহাজের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেভাবেই আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।'
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কী ভূমিকা রাখা হচ্ছে প্রশ্নে হাছান বলেন, 'জাহাজের মধ্যে কয়লা আছে, কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যাতে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়। সেভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
এবং যারা জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, তারা ইতিমধ্যে মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করছে এবং আপনারা নাবিকদের পরিবারের সাথে কথা বললেও জানতে পারবেন তারাও অনেকটা আশ্বস্ত। আশা করছি, আমরা সহসা নাবিকদের উদ্ধার করতে পারব।'
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতের
একটি বন্দরে কয়লা নিয়ে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরের কাছে এমভি আবদুলস্নাহর নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালি জলদসু্যরা। জিম্মি হয় জাহাজের ২৩ নাবিক ও ক্রু। তারা সবাই বাংলাদেশি।
কয়েকবার স্থান পরিবর্তনের পর জাহাজটিকে পান্টল্যান্ডের কাছের উপকূলে জাহাজটি নোঙর করা আছে।
জাহাজটির মালিকপক্ষ বুধবার দুপুরে জানায়, জলদসু্যদের সাথে প্রথমবারের মতো কোনো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার নাবিকদের স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেয় জলদসু্যরা।
এর আগে এমভি আবদুলস্নাহ এবং জিম্মি নাবিকদের জলদসু্যদের হাত থেকে মুক্ত করতে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে খবর এসেছে।
সোমালিয়ার পান্টল্যান্ডের নুগাল অঞ্চলের পুলিশ বিভাগের কমান্ডারের বরাত দিয়ে শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছে সাগরে থাকা এমভি আবদুলস্নাহ ছিনতাইকারী জলদসু্যদের সঙ্গে ভূমির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে তারা একটি অভিযান শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার গভীররাতে সোমালিয়া উপকূলে জলদসু্যদের হাতে জিম্মি অবস্থায় থাকা বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুলস্নাহর কাছেই একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের কথা জানিয়েছিল ইইউএনএভিএফওআর আটলান্টা অপারেশন।
এর আগে ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তায় থাকা ইউরোপীয় বাহিনী আবদুলস্নাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ সরকার তাতে সায় দেয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনায় জানিয়েছিলেন।
২০১০ সালে কবির গ্রম্নপের মালিকানাধীন এমভি জাহান মণি নামে আরও একটি জাহাজ জলদসু্যদের কবলে পড়েছিল। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর জাহাজটি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।