আবির উৎসব, শাঁখারি বাজারে বইছে আমেজ
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আগামীকাল সোমবার আবির খেলায় মেতে উঠবে শাঁখারি বাজার। ইতোমধ্যে হরেক রকম দোকানে ভরে উঠেছে শাঁখারি বাজারের রাস্তাঘাট। কেউ দোকানের সামনে ছোট চৌকিতে, কেউ ফুটপাতে বসে, আবার কেউ অস্থায়ী ছোট দোকান গড়ে বিক্রি করছেন রঙবেরঙের আবির। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ উৎসব উদযাপন করে থাকে। এ দিন রাজধানীতে সকাল থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আবির, গুলাল ও বিভিন্ন প্রকার রং হাতে-মুখে মেখে খেলায় মত্ত হন।
আবির উৎসবকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে রঙের বেচাকেনা। বিক্রেতারা জানান, রোজার কারণে বেচাকেনা কিছুটা কম হলেও ধীরে ধীরে লোকসমাগম বাড়ছে। আগে রং পাওয়া যেত চার-পাঁচ রকমের। লাল, সবুজ, গোলাপি, হলুদ, কমলা রঙের আবিরই শুধু বিক্রি করতেন তারা। এবার আছে আকাশি, বেগুনি, খয়েরিসহ কয়েক প্রকার রং। আবার সবুজ, গোলাপিরই তিন-চার প্রকৃতির রং মিলছে শাঁখারি বাজারে।
শাঁখারি বাজারে আবির বিক্রেতা সাজু কুমার নাগ (৩৮) বলেন, '১৬ বছর ধরে আমি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কলকাতা থেকে পরিচিতদের দিয়ে এসব রং আনিয়েছি। এবার রোজার কারণে বেচাকেনা এখনো সেভাবে হচ্ছে না। তবে আশা করি কাল-পরশু বেচাকেনা বাড়বে। এবার রঙের দাম দ্বিগুণ। গত বছর যে রঙের দাম ২০০ টাকা ছিল, এবার তা ৪০০ টাকা কেজি।'
শাঁখারি বাজারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবির কিনতে আসা প্রশান্ত নামের এক ক্রেতা বলেন, আবির উৎসব এলে সবার মাঝে
অন্য রকম আনন্দ কাজ করে। গত বছর আমি কলকাতায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এই উৎসব উদযাপন করেছি। এবার করব পরিবারের সঙ্গে। লাল আবির আমার বেশি পছন্দের। কিন্তু অন্য রঙের আবির নিয়েও সমস্যা নেই। আমার বউয়ের প্রথম পছন্দ সবুজ আবির। বাচ্চাদের পছন্দ নীল। এ জন্য তিনটি রং বেশি করে কিনেছি।
গতবারের তুলনায় এবার আবিরের দাম বেড়েছে জানিয়ে এই ক্রেতা বলেন, 'আমি ভারতি আবির বেশ ভালো করে চিনি। কিন্তু এখানকার বিক্রেতারা যেসব রং বিক্রি করছেন, তা ভারতের নয়। শুধু মানুষকে বোকা বানিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। গত বছর আবিরের কেজি ছিল ১৫০ থেকে ১৮৯ টাকা, এবার তা ৩০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করছে। তবু সবাই কিনছে।'
ধনী সেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আমি চার কেজি আটটা রং কিনেছি। প্রতি বছরই কেনা হয়। সোমবার আবির খেলা কিন্তু আজকেই কিনে রেখেছি। বাচ্চারা এখন এ নিয়ে খেলা করবে। আবির দাম নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তবে গুণগত মান নিয়ে সমস্যা। যেহেতু এটা মুখে কিংবা শরীরে লাগানো হয়, এ জন্য এটা মানসম্মত কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যতটুকু জানি ভারত থেকে যেসব আবির আসে, তা নিরাপদ। বাংলাদেশে তৈরি আবির সস্তা, তাই মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।
রং বিক্রেতা সুমন সুখ বলেন, 'শাঁখারি বাজারে অন্তত ২০টা দোকানে আমি পাইকারিতে আবির বিক্রি করি। সব দোকানে একজনেরই আবির। তবে কোনোটা পুরনো, কোনোটা নতুন। অনেকে ভারতের আবির বলে বেশি দামে বিক্রি করছে। আসলে এখানে ভারতের কোনো রং নেই। তবে রঙের মধ্যে যে পারফিউম মেশানো হয়, সেটি ভারতের। সেটার কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ১৫ প্রকারের রং আছে। লাল, কমলা, নীল সবচেয়ে বেশি চলে। অনেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকাও বিক্রি করে। আমাদের পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি শেষ, এখন খুচরা বিক্রির পালা।'
আবির উৎসবকে কেন্দ্র করে শাঁখারি বাজারের জুয়েলারি দোকানগুলোয় ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শাড়ির দোকানও সেই তালিকার বাইরে নেই। শাঁখারি বাজারে শাড়ি কিনতে আসা ঊর্মি নন্দী নামের একজন ক্রেতা বলেন, 'আবির উৎসবে নতুন শাড়ি-বস্নাউজ না হলে চলবে না। এ জন্য বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন শাড়ি কিনতে এসেছি। সবাই মেচিং করে শাড়ি কিনেছি। সঙ্গে হাতের জন্য নতুন একজোড়া বালাও কানের দুলও কিনেছি।'
বাংলাদেশের বাজারে আবির নিয়ে তেমন শোরগোল না থাকলেও ভারতে এর যথেষ্ট কদর রয়েছে। ভারতীয়দের মাঝে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই আবির খেলা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আবির উৎসবকে আলাদা করে তাদের অনেকেই ভোটকে কেন্দ্র করে আবির মজুতও রাখতে শুরু করেছে।
ভারতীয়রা বিজয় মিছিল হোক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান, সব জায়গায় আবিরের রঙে খেলে। তাদের এই সংস্কৃতি ধীরে ধীরে বাংলাদেশেও আসছে বলে মনে করেন অনেকে।