ঢাকার চকবাজারে আবারও কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনায় মানুষের মধ্যে চরমভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই সেহরি খেতে পারেননি। তারা প্রাণে বাঁচতে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এদিকে গুলশানের একটি ১৮ তলা ভবনের নয় তলায় এসির আউটডোরে আগুন লেগেছিল। পৃথক দুটি অগ্নিকান্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার চকবাজার থানাধীন ইসলামবাগের হাজী বাবুল রোডের একটি চার তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে। দ্বিতীয় তলার পুরোটা জুড়ে ছিল এশিয়া রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা। কোম্পানিটি মূলত জুতো তৈরি করত। কারখানায় ঈদ উপলক্ষে তৈরি করে মজুত করা হয়েছিল প্রচুর জুতা। এছাড়া জুতা তৈরির আঠা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল এবং রাবার ছিল।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় বাড়িটির
লোকজন সেহরি খেতে উঠেন। তারা সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অনেকেই আবার সেহরি খেতে বসেছিলেন। এ সময় পুরো বাড়ি থেকে পোড়া গন্ধ বের হতে থাকে। যা মুহূর্তেই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পলকে বাড়িটির দ্বিতীয় তলা থেকে অনর্গল কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। এ সময় কারখানায় থাকা শ্রমিকরা আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে থাকেন। কারখানাটিতে অন্তত ১০ জন শ্রমিক নিয়মিত রাতে থাকেন। ঘটনার সময়ও তারা ছিলেন। আগুন লাগার পর তারা দ্রম্নত নিরাপদ জায়গায় চলে যান।
স্থানীয়রা বলছিলেন, চকবাজারে কেমিক্যালের গুদামে আগুন লাগার খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চরম আতঙ্ক। কারণ চকবাজারে অতীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনা তাদের মনে পড়ে যায়। অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষ দিশেহারা হয়ে যে যার যার মতো নিরাপদ জায়গার দিকে ছুঁটতে থাকেন। অনেকেই সেহরি খাবার ফেলেই দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। পুরো এলাকায় শুরু হয়ে যায় এক শোরগোল। আবাল বৃদ্ধ বনিতা যে যার যার মতো বাড়ি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। এমন সময় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটনায় ঘটনাস্থলের আশপাশের শত শত মানুষ সেহরি খেতে পারেননি। অনেকেই না খেয়েই রোজা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার যায়যায়দিনকে জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো একের পর এক ঘটনাস্থলে যেতে থাকে। সবশেষ ৯টি ইউনিট প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে আগুন পুরোপুরি নির্বাপিত হতে সকাল সাড়ে ৯টা বেজে যায়। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে ঘটনার রাত ছিল চকবাজারের বাসিন্দাদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের রজনী।
অগ্নিনির্বাপণ শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থলে যাওয়ার রাস্তা একেবারেই সরু। ছোট ছোট গাড়িও প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া ঘটনাস্থলে এবং তার আশপাশে কোনো পানির ব্যবস্থা ছিল না। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পানি দিয়েই আগুন নিভানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সে চেষ্টা খুব বেশি সফল হয়নি।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীতে পানির পাম্প বসানো হয়। দীর্ঘ পাইপ দিয়ে পানি টেনে এনে আগুন নেভাতে হয়েছে। এতে করে অনেক সময় লেগেছে। এছাড়া কারখানায় কেমিক্যাল, রাবার, জুতার আঠা ও পস্নাস্টিকের দানা থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। দ্রম্নততার সঙ্গে ব্যবস্থা না নিতে পারলে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও ছিল। অথচ রাস্তা ও পানির ব্যবস্থা থাকলে দ্রম্নত আগুন নেভানো সম্ভব ছিল। কারখানায় কি ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষতির বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।
ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক যায়যায়দিনকে বলেন, শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণও জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনের কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জনের মৃতু্য হয়। এরপর পুরানো ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরানোর বিষয়ে উচ্চ আদালত ও সরকারের তরফ থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়। একের পর এক অভিযান চালিয়ে কেমিক্যালের গুদাম হিসেবে ভাড়া দেয়ায় বহু বাড়ির পানি, বিদু্যৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এমন ঘটনার পরেও পুরান ঢাকা থেকে পুরোপুরি সরেনি কেমিক্যালের গুদাম।
গুলশানে অগ্নিকান্ড: শনিবার বেলা সোয়া ৪টার দিকে ঢাকার গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বর সংলগ্ন ১৮ তলা এডবিস্নউআর নামের ভবনটির ৯ তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার যায়যায়দিনকে জানান, খবর পেয়ে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট দ্রম্নত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। মূলত এসির (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র) আউটডোরে আগুন লেগেছিল। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ভবনটির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকেই ভয়ে দ্রম্নত জরুরি সিঁড়ি দিয়ে নিরাপদ জায়গায় নেমে গিয়েছিলেন।