অবশেষে বাজারে কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম। এতে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে। মুদি পণ্য থেকে শুরু করে মাছ, মাংস ও সবজিসহ কমতির দিকে রয়েছে ফলের বাজারও। তবে কিছু কিছু পণ্য এখনো সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে, তবে সপ্তাহ ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম কমেছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্যের দামে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর সুফল পেতে শুরু করছে। আমদানি পণ্যের শুল্ক হ্রাস, আমদানিতে এলসি জটিলতা কমানো, বাজার মনিটরিং জোরদারসহ প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম নির্ধারণ ও সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রমের প্রভাবে এমন হয়েছে। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা গেলে বাজারদর আরও সহনীয় হতো বলে মনে করছেন তারা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম রমজানের তুলনায় এদিন অধিকাংশ পণ্যের কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় দাম কমতির দিকে রয়েছে। এছাড়া ক্রেতারা অন্যান্য রমজানের তুলনায় কম পণ্য কিনছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।
সপ্তাহ ব্যবধানে শুক্রবার রাজধানীর বাজারে কেজিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা দরে, যা সরকার নির্ধারিত দামের থেকেও ৫ টাকা কম। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানির ঘোষণা ও দেশীয় পেঁয়াজের প্রধানজাত 'হালি' পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারদরে বড় পতন হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পর সহনীয় দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরে খুশি সাধারণ ভোক্তারা। একইভাবে ১০ রমজানে এসে কমেছে দেশি রসুন ও আদার দামও। বাজার ও মানভেদে এই দুই পণ্যেও কেজিতে দাম কমেছে প্রায় ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত। এদিন প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছে ১৮০ এবং রসুন দেড়শ টাকা দরে। তবে বাড়তি রয়েছে আমদানি করা রসুনের দাম।
এছাড়া বাজারে কমতির দিকে রয়েছে বেশির ভাগ সবজির দাম। তবে কিছুটা বেড়েছে আলুর দাম। অন্যদিকে গত সপ্তাহের দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। এর বাইরেও রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সুপারশপগুলোতে চলছে বিশেষ ছাড় এবং সরকার নির্ধারিত বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে কম দামে পণ্য কিনতে পারায় বাজারে এসব পণ্যের বিক্রি কমেছে বলেও জানান অনেক দোকানি।
দেখা গেছে, বাজারের তুলনায় ৫ লিটারের ভোজ্যতেলে ৫০ থেকে ৮০ টাকা ছাড় রয়েছে বিভিন্ন সুপারশপে। এছাড়া ডিম, লবণ, চিনি, ডাল ও ছোলার মতো পণ্যেও বাজারের থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। ফলে অনেক ক্রেতাই এসব পণ্য কিনতে এখন সুপারশপমুখী।
এদিকে সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রোজার শুরুতে ১০০ টাকার ওপরে বেগুনের কেজি বিক্রি হলেও এদিন বিক্রি হয়েছে ৫০ থকে ৬০ টাকা দরে। বিভিন্ন চেইন শপে যা বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে। একইভাবে শসার কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা এবং লাউ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। দেখা গেছে এদিন বেশির ভাগ সবজিই বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রমজানে মাছ-মাংসের চাহিদা বাড়তি থাকায় ক্রেতারা কম সবজি কিনছেন। ফলে দাম কমতির দিকে রয়েছে।
তবে বাজারে চাল ও আলুর দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুতে প্রায় ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার ওপরে। কিছুটা কমে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকা এবং সোনালি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে এবং ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে।
এদিকে গত সপ্তাহে মিলপর্যায়ে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ১শ' টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল, যা এ সপ্তাহেও অব্যাহত রয়েছে। এদিন বাজারে মোটা চালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা এবং মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭০-৭২ টাকা দরে।
এদিকে শুক্রবারও রাজধানীর অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে ক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গরুর মাংসের পাশাপাশি দুধ ও ডিম কিনছেন বেশির ভাগ ক্রেতা। সুলভ মূল্যের পণ্য বিক্রির কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা যায়, সুলভ মূল্যে পণ্য কেনাকাটায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তবে বাজারে বাড়তির দিকেই রয়েছে সব ধরনের মাছ ও মাংসের দাম। এদিন প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮শ' টাকায়। এছাড়া অন্যদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা দরে।
এদিকে মাছ বাজারে মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় কাতল ৪শ' টাকা, বড় পাঙাশ ২২০ টাকা, চাষের কই (ছোট) ৩শ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, শিং মাছ ৪শ' থেকে ৫শ' টাকা, শোল মাছ ৮শ' টাকা, পাবদা ৪শ' থেকে ৫শ' টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকারভেদে ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা, মলা মাছ ৫শ' টাকা, বাইলা ৮শ' টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪শ' টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা, গুঁড়া মাছ ৩শ' টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ' টাকা, গলদা ৭শ' এবং বাগদা ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা ও রূপচাঁদা ৯শ' টাকা দরে। সে হিসাবে গত সপ্তাহের তুলনায় বিভিন্ন ধরনের মাছে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।