যানজট কমিয়ে যাত্রী ভোগান্তি লাঘবে ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে সাত দিন মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আওতামুক্ত থাকবে পচনশীল ও জরুরি পণ্যবাহী বাহন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে এক সভায় এ কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঈদুল ফিতর উদযাপনে সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতিমূলক এ সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, 'প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে যানজটের কারণে যাত্রীদের প্রচুর ভোগান্তি আমরা দেখতে পাই। তাই এ বছর ঈদের আগে তিন দিন এবং পরে তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখতে হবে। আর প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্ট মালামাল, ওষুধ জাতীয় পণ্য, জ্বালানি ও সারজাতীয় পণ্যের গাড়িগুলো আওতামুক্ত থাকবে। অর্থাৎ বাকি সব বন্ধ থাকলেও এগুলো শুধু চলবে।'
রাজধানীতে লক্কর-ঝক্কর বাস চলাচল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এত উন্নয়ন হলেও লক্কর-ঝক্কর বাস চলাচল বন্ধ হয়নি। এজন্য ১২ বছর মন্ত্রী পদে থেকে এখন কথা শুনতে হয়। কাল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র?্যাম্প উদ্বোধন করতে গেলাম, সেখানে আমাকে জিজ্ঞেসা করল- এত বছরে মন্ত্রী আছেন, গাড়িগুলোর এই অবস্থা। এই গাড়িগুলো চলে চোখের সামনে। কেন এই বাস বন্ধ করা যায়নি।'
সভায় উপস্থিত পরিবহণ মালিক শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, 'এটা সত্যিই লজ্জার বিষয়। আপনাদের কি লজ্জা করে না আমাদের দেশ এত এগিয়ে গেল আর আমাদের গাড়ি গরিব গরিব চেহারা। শুধু ঈদের আগে লোক দেখানোর জন্য গাড়ি রঙ করবেন না। এই বিষয়টি ভালোভাবে দেখতে হবে। গাড়িগুলো একটু সাফসুতরো করে ফিটনেস নিয়ে বের করবেন। আমি দীর্ঘদিন এই সেক্টরে মন্ত্রী আছি। প্রতি বছর এমন সভা হয়। তবে সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা ঠিকভাবে পালন হচ্ছে কিনা সেটি আর পরে মূল্যায়ন করা হয় না। এটা মূল্যায়ন করা দরকার।'
হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'অনেকটা এমন যে- 'ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দার'। সেই সঙ্গে বিআরটিএরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ফেনী থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে আসতে যত সময় লাগে, তার চেয়ে বেশি সময় লাগে ফ্লাইওভার থেকে ঢাকায় ঢুকতে। এখন এমন অবস্থা মাঝে মাঝে হয় যে দুই ঘণ্টা লাগে। ঈদের আগে উত্তরবঙ্গের রাস্তাটা দেখেন। গাজীপুর, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পশ্চিম পাশে, এলেঙ্গা এগুলো দেখতে হবে।'
হাইওয়ে পুলিশের উদ্দেশ তিনি আরও বলেন, 'ঈদের পরে নজরদারি বাড়তে হবে। থ্রি হুইলার, আপনারা এটা বন্ধ করবেন। কে মানা করে? কে শুনবে না? কোন জনপ্রতিনিধিরা? এদেশে ভোটের রাজনীতি হয়। অনেকেই ভাবেন, তারা গরিব, তাই চালাতে দেয়। কিন্তু জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে জীবন আগে।'
সভায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ পরিবারের সদস্যদের ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন সেতুমন্ত্রী। এ পর্যন্ত ৭৩ জনকে এই টাকা দেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।
যানজটের ১৫৫ স্পট
এদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে সভায় সারা দেশে যানজটের ১৫৫টি স্পট চিহ্নিত করা হয়। ঈদের আগে ও পরে এই জায়গাগুলো নজরদারির আওতায় আনার কথা বলা হয়।
এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্পট, ঢাকা-উত্তরবঙ্গের সড়কের ৫২টি, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ছয়টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি ও ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কের আটটি স্পট।
ঢাকা বাইপাস (মদনপুর-ভুলতা-ভোগড়া), নবীনগর-চন্দ্রা, ঢাকা-জয়দেবপুর- ময়মনসিংহ, ঢাকা-জয়দেবপুর ঢাকা (ভোগড়া)-চন্দ্রা-এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা এবং ভাঙ্গা-বরিশালের মতো জাতীয় মহাসড়ক ও করিডোরগুলোর মেরামত বা সংস্কার কাজ ঈদের সাত দিন আগেই সম্পন্ন করতে হবে বলে সভায় মতামত আসে। পরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এতে মত দেন।
ঈদের আগে সাত দিন ও পরের পাঁচ দিন সিএনজি ও ফিলিং স্টেশন সার্বক্ষণিক চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী।
সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুলস্নাহ আল মামুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান, সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উলস্নাহ, বাংলাদেশ শ্রমিক পরিবহণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন, বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশন চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।