চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ইব্রাহীম নেওয়াজ (৩০) নামে ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক বন্দির মৃতু্য হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি 'আত্মহত্যার অপচেষ্টারত অবস্থায়' বন্দিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু স্বজনদের দাবি, নির্যাতন চালিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় কারাগারের তিন রক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কারা বিভাগের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান বলেন, কারাগারের ভেতরে এক কয়েদি আত্মহত্যা করেছে। ওই বন্দির আত্মহত্যার চেষ্টা ও পরে মৃতু্যর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কারাগার সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতরে বন্দি গণনার সময় একজন কম পাওয়া যায়। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কারা অভ্যন্তরে খাদ্য গুদামের সামনে চৌবাচ্চার টিনশেডের রডের সঙ্গে পস্নাস্টিকের বস্তা ও কম্বলের বর্ডারের অংশ দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
পরে দ্রম্নত তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানায় ইউডি মামলা দায়েরের পর ঘটনাটি ফাঁস হয়।
মৃত বন্দি ইব্রাহীম নেওয়াজ রাঙামাটি পৌর সদরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলম ডক এলাকার আলী নেওয়াজের ছেলে। রাউজান থানার একটি মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাজা পরোয়ানামূলে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। ঘটনাটিসহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দুই হাজতির অস্বাভাবিক মৃতু্য হলো।
এদিকে, ইব্রাহীম নেওয়াজের মামাতো ভাই নাইমুর রহমান তূর্য বলেন, 'আমার ভাইকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ ঘটনার এতদিন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে জেল সুপার গত সোমবার রাতে হঠাৎ ফোন করে জানান, আমার ভাই মারা গেছেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে আমরা কারাগারে যাই। গিয়ে সেখান থেকে মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে এসেছি। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা রাঙামাটি ফিরে আসি।'
আমরা যা দেখেছি, আমার ভাইকে কারাগারে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। তার গলায় বড় ধরনের ক্ষত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত পারিবারিকভাবে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, ওই বন্দি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে কারাগারের তিন রক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- এরশাদ উলস্নাহ, হাবিবুর রহমান ও আল আমিন। এ ছাড়া প্রধান কারারক্ষী মো. জসিম, সহকারী প্রধান কারারক্ষী আবদুল লতিফ এবং কারারক্ষী মাসুদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
এ ছাড়া কারা অভ্যন্তরে বন্দির মৃতু্যর কারণ খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) টিপু সুলতানকে প্রধান করে বিভাগের আরও তিন জেলা কারাগারের তিন জেল সুপারকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। তবে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়নি।