দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শরণাপন্ন হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম। এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জবির শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা যায়, জবির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে লিখিত আবেদনে 'বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার' চেয়েছেন। সেই সঙ্গে তার জীবনটাকে 'পুনরুদ্ধার করার' আকুল আর্জি জানিয়েছেন।
ওই আবেদনের বিষয়ে বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে আবেদনটির 'রিসিভড কপি' হাতে নিয়ে বঙ্গভবনের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুলেছেন মীম। সেখানে বঙ্গভবন নিরাপত্তা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সিল ও স্বাক্ষর দেখা যায়।
বঙ্গভবন নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শচীন ভৌমিক বলেন, 'এ সংক্রান্ত একটি আবেদন গ্রহণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
আবেদনে বলা হয়েছে, 'আমি আপনার স্বনামধন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ৩য় ব্যাচের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে উপাচার্য মহোদয় বরাবর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বুলিং ও যৌন নির্যাতনের বিচার চেয়ে একটি আবেদন দায়ের করি। বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় আমার যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের দায়িত্বে ছিলেন। এটার বিচার আমি এখনো পাইনি, উল্টো আমাকে যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষক এবং তার সমর্থনে বিভাগের চেয়ারম্যান, অনার্স পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করিয়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমাকে ভীষণরকম বহিষ্কার ভয়ভীতি, পরীক্ষার ফেল করানো, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করে, মৃতু্যহুমকি দিয়েই যাচ্ছে, আমাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে আমি নিউজ মিডিয়াতে বিষয়টি প্রকাশ করি।'
'এমতাবস্থায়, মহামান্য আপনার কাছে সর্বশেষ আশা ভরসা নিয়ে আবেদন জানাচ্ছি। আপনার পক্ষ থেকে আমার এই বুলিং ও যৌন নিপীড়নের দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতার ব্যবস্থার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি এবং আমাকে ফেল করানো বিষয়গুলো আপনার নির্ধারিত বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পুনঃবিবেচনা পূর্বক আমার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে আমার জীবনটাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আকুল আর্জি জানাচ্ছি।'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, 'মিম তার ওই আবেদনের অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেননি।'
অন্যদিকে, বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ জবির ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের ওই শিক্ষার্থী। যে কারণে আতঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমের বিরুদ্ধে সোমবার বিকালে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দেন তিনি।
ডিবি সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা দুই শিক্ষক ছাড়াও অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়।
অভিযোগ দেওয়ার সময় ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মীম বলেন, 'আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম ও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন।'
তিনি বলেন, 'আমি অভিযোগ তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।'
ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, 'জবি শিক্ষার্থী মীমের অভিযোগ পেয়ে আমাদের সাইবারের একটি টিম কাজ করছে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমরা সমাধান করতে পারব না, তাকে কেন বারবার ফেল করানো হচ্ছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে তাকে আটকে রাখা বা হুমকি দেওয়ার বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করছি।'