বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মৃত জেলিফিশে ভরে গেছে কুতুবদিয়ার সৈকত

শাহেদুল ইসলাম মনির, কুতুবদিয়া (কক্সবাজার)
  ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মৃত জেলিফিশে ভরে গেছে কুতুবদিয়ার সৈকত

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার সমুদ্র সৈকত ভরে গেছে মৃত জেলিফিশে। কয়েক দিন ধরে অসংখ্য মৃত জেলিফিশ ভেসে এসে জড়ো হচ্ছে সৈকতে। মৃত জেলিফিশের কারণে সাগরে জেলেরা মাছ শিকার করতে পারছেন না। মাছের পরিবর্তে তাদের জালে আটকা পড়ছে জেলিফিশ।

সরেজমিন কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ সমুদ্র-সৈকতের বালিয়াড়িতে দেখা যায়, অসংখ্য মৃত জেলিফিশ পড়ে আছে। বক্স আকারে এর একেকটি এক থেকে দেড় ফুটের সমান। জেলিফিশ সাগরের ক্ষতিকর সামুদ্রিক প্রজাতি। এটি মূলত গ্রীষ্মকালে খরা নোনা পানি থেকে সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের ভাষায় এটিকে 'নুইন্ন্যা' বলে। সাগরে এ জেলিফিশ বৃদ্ধি পেলে মাছের আনাগোনাও কমে যায়। শুধু তাই নয়, মানুষের গায়ের চামড়া এবং জেলেদের জালেরও ক্ষতি হয়। ফলে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন না সাগরবেষ্টিত দ্বীপ কুতুবদিয়ার বেশিরভাগ জেলে। বৃষ্টি হলে বা সাগরে মিষ্টি পানি বৃদ্ধি পেলে এটি দূর হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। 

মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি মাহমুদ উলস্নাহ বলেন, 'মাছ না পেয়ে সাগর থেকে খালি হাতে ফিরেছি। খরা নোনা পানি থেকে সৃষ্টি জেলিফিশ বা নুইন্ন্যার বেশিরভাগ দেখা যাচ্ছে। যার কারণে জালে ধরা পড়ছে এই জেলিফিশ। প্রতি বছর এ সময় ক্ষতিকর সামুদ্রিক এ প্রজাতির দেখা মেলে। নিজেদের জাল নিরাপদে রাখতে সাগর থেকে জাল তুলে এনেছি।'

পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক জাতীয় সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার আহ্বায়ক এম শহীদুল ইসলাম বলেন, 'গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে কম লবণাক্ততার জায়গায় জেলিফিশ উপকূলে চলে আসতেই আটকে পড়ে বালুতে। তখন মরে যায়। কাছিমের খাদ্য জেলিফিশ। সাগরের কাছিমের সংখ্যা কমে গেলে জেলিফিশের বিস্তৃতি ঘটে বেশি। বিষাক্ত এ জেলিফিশ সামুদ্রিক মাছের যম। সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা এসব জেলিফিশের সংস্পর্শে গেলে চুলকানিসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। জেলিফিশের মৃতু্য জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের একটি লক্ষণ। সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে মৃত জেলিফিশ পড়ে থাকা উদ্বেগজনক।'

কুতুবদিয়া উপজেলার মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, 'সাগরে বিষাক্ত ধরনের জেলিফিশের পরিমাণ বেড়ে গেছে যা মানুষের শরীরের সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি হতে পারে। জেলিফিশের প্রধান খাদ্য মাছ ও মাছের ডিম। মাছ ও ডিম খেয়ে ফেলার কারণে সাগরের মাছ কমে যাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সামুদ্রিক প্রাণী কচ্ছপ কমে যাওয়া ও সামুদ্রিক দূষণের ফলে বিশ্বজুড়ে সাগরে জেলিফিশের বিস্তার বাড়ছে। এর বিস্তার রোধের বিষয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে