আজকের যায়যায়দিন

সন্তান জন্মের সময় প্রসূতি মায়েদের ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয় 'জি-প্যাথেডিন' ইনজেকশন। অত্যন্ত সংবেদনশীল এ ওষুধ অপারেশনের সময় বা অপারেশনের পর চিকিৎসকরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশনই দীর্ঘ সাত থেকে আট বছর ধরে নকল করে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র।

প্রচলিত 'জি-ডায়াজিপাম' ঘুমের ইনজেকশনকে ঘরোয়াভাবে রূপান্তর করে চেতনানাশক 'জি-প্যাথেডিন' ইনজেকশন হিসেবে চালানো হতো। অথচ 'জি-প্যাথেডিন' তৈরির জন্য শুধু অনুমোদন রয়েছে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের।

জি-ডায়াজিপাম নামের ঘুমের ইনজেকশনের লেবেল পাল্টে চেতনানাশক জি-প্যাথেডিন ইনজেকশনে রূপান্তরিত করা চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তাররা হলেন- আলমগীর খাঁন (৪০), মাসুদ রানা (২৯) ও আহসান হাবীব শাওন (৩০)।

গত ১৮ মার্চ মতিঝিল, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ। এসময় তাদের কাছ থেকে জি-প্যাথেডিন ইনজেকশন ২০০ পিস, ২২০ পিস জি-প্যাথেডিনের অ্যাম্পুল, ১ হাজার ১০ জি-ডায়াজিপামের অ্যাম্পুল, ৫২০ পিস জি-প্যাথেডিনের খালি বক্স, ২০০ পাতা জি-প্যাথেডিন ইনটেক স্টিকার, ৫ কেজি অ্যাসিডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার আলমগীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে ঘুমের ইনজেকশন জি-ডায়াজিপাম প্রতি পিস ৮ টাকায় কেনেন। বাসায় এনে অ্যাম্পুলগুলো অ্যাসিডে ভিজিয়ে রেখে লেবেলগুলো তুলে ফেলে। পরে সেগুলোতে ব্যথানাশক জি-প্যাথেডিনের লেবেল লাগিয়ে ফয়েল পেপার দিয়ে প্যাকেটজাত করেন। ৮ টাকায় কেনা জি-ডায়াজিপাম ইনজেকশনের লেবেল পাল্টে প্রতি পিস ৬০০ টাকায় বাজারজাত করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্যাথেডিন ইনজেকশন সাধারণত অপারেশনে চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই ভেজাল প্যাথেডিন প্রয়োগে নানা দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। ঘুমের ইনজেকশন কেনা ও লেবেল পাল্টাতে পিস প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা খরচ করে প্যাথেডিনে রূপান্তরিত করে ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হতো। এতে চক্রটির লাভ প্রতি পিসে প্রায় ৫৯০ টাকা।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, প্যাথেডিন ইনজেকশন ব্যবহার করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন নামিদামি হাসপাতালের ফার্মেসিতে এসব ভেজাল প্যাথেডিন ইনজেকশন বিক্রি করা হতো। তথ্যের ভিত্তিতে বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ২০০ ভেজাল প্যাথেডিনসহ সেখান থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে একদিকে মুনাফা, অন্যদিকে রোগীদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে চক্রটি। মিটফোর্ডে কারা এসব ঘুমের ইনজেকশন বিক্রি করতো এবং কোন কোন স্থানে এসব প্যাথেডিন বিক্রি করা হচ্ছে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই প্যাথেডিন ইনজেকশন প্রয়োগে কেউ মৃতু্যঝুঁকিতে পড়েছে কি-না এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।