ঈদযাত্রায় অনিরাপদ যানবাহনে যাত্রী ওঠালেই ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে কোনোভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেন, 'ঈদযাত্রায় কেউ পণ্যবাহী যানবাহনে কিংবা অন্য কোনো যানবাহনের ছাদে, খোলা ট্রাক বা পিকআপে যাত্রী ওঠাতে পারবেন না। আমরা কোনোভাবেই এবার অনিরাপদ ঈদযাত্রা সহ্য করব না। আমরা এবার হাইওয়ে পুলিশ সড়কে কঠোর থাকব। যারা অনিরাপদ যানবাহনে যাত্রী ওঠাবেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর, ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে মহাসড়ক-সড়ক পথে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, 'মালিক-শ্রমিক ভাইদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ, আপনারা কথা দিয়েছেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে দায়িত্ব নেবেন। যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটি পালন করুন। কোনো ধরনের ফিটনেসবিহীন, অনিরাপদ, লক্কর-ঝক্কর যানবাহন বা বাস সড়কে যেন না চলাচল করে। আমরা কঠোর থাকব। ফিটনেস না থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।'
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, 'আমাদের জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, শিল্প পুলিশসহ সবাই মিলে এবারের ঈদযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। আমাদের এবারের সুস্পষ্ট বক্তব্য কোনোভাবেই ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলবে না। অনিরাপদ যাত্রার কারণে আনন্দের ঈদ নিমিষেই বিষাদে রূপ নিতে পারে। এবার সেটি ভালোভাবেই প্রচার করা হবে।'
তিনি বলেন, চলমান রমজান এবং আসন্ন ঈদে সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করবে হাইওয়ে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্য অনিয়ম করবে না। প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ নানান ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে আমরা প্রস্তুত করেছি। এরপরও যদি কোনো সদস্য অনিয়ম করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যানজট ও দুর্ঘটনার বড় কারণ। উচ্চ আদালত কর্তৃক এসব নছিমন, করিমন, ভটভটি মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা মহাসড়ক থেকে এসব প্রত্যাশিত মাত্রা কমাতে পারিনি। এর মধ্যে যদি এসব ঈদযাত্রায় মহাসড়কে নামে, তবে তা হবে ঝুঁকির কারণ। এ জন্য প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপার ও পরিবহণ মালিক শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে হবে।
সভায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএর চেয়ারম্যান/জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির চেয়ারম্যান/জেনারেল সেক্রেটারি, ঢাকা বাস-ট্রাক ওনার্স গ্রম্নপের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বাস মালিক সমিতিসহ হাইওয়ে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
কোনো বাস বাড়তি ভাড়া নিলেই ব্যবস্থা : রাঙ্গা
এবারের ঈদযাত্রায় আন্তঃজেলা বা দূরপালস্নার কোনো গণপরিবহণ যদি বাড়তি ভাড়া নেয়, প্রমাণ যদি পাওয়া যায়, তবে ওই গণপরিবহণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা।
পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মহাসড়ক/সড়কপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
রাঙ্গা বলেন, 'এবারের ঈদে সম্ভাব্য কোনো এলাকায় জট, যানজট বা বস্নক তৈরি হতে পারে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এবার হাইওয়েতে ঈদযাত্রায় ড্রোনের সহায়তা নিচ্ছি। ড্রোনের সহায়তায় অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারব। হাইওয়ের অনেক রাস্তা চার লেন হচ্ছে। কোথাও কোথাও হয়ে গেছে। এখন রাস্তায় যদি কোনো যানবাহন তাৎক্ষণিক অকেজো হয়ে পড়ে, তাহলে সেটি এখনো সরানো সহজ হবে। ত্রম্নটিপূর্ণ কোনো যানবাহন যাতে ঈদে সড়কে না নামে, তা নিশ্চিত করতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'ঈদে আমরা সবাই একসঙ্গে যেতে চাই। তা না করে আমরা ভাগ ভাগ করে, আগে বা পরেও যেতে পারি। তাহলে পাঁচ-সাত বা আট ঘণ্টার মধ্যেই গন্তব্যে যেতে পারব। ঈদের দুই দিন আগেই যেতে হবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। জনসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহণ আমাদের অনেক কম। হজের সময় সৌদিতে সরকার বাস ভাড়া করে। আমাদের এখানে ঈদে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আপনি আরও আগে বা ঈদের পরও যেতে পারেন। আমরা আশ্বস্ত করছি, ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা লক্ষ্য করি, কিছু লক্কর-ঝক্কর বাস যেগুলো সারা বছর সিরিয়াল পায় না, সেগুলো ঈদের সময় রাস্তায় নেমে পড়ে। এসব আমরাও ধরতে পারি না, পুলিশও বুঝতে পারে না, কোত্থেকে এগুলো রাস্তায় আসে। এগুলো রিজার্ভ হিসেবে চলে। গার্মেন্ট শ্রমিকরা নিয়ে যায়। যে রাস্তায় আমাদের ছোট বাসও চলে না, সেখানে দেখি বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস ঢুকে পড়ে। আমরা এখনো মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন ও ভটভটি সরাতে পারিনি। এটাও একটা বাধা আমাদের।'
প্রতিবছরই বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ আসে। প্রমাণও মেলে। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, 'অনেক পরিবহণই ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেসব বাস কোম্পানি সুনামের সঙ্গে কাজ করছে, তাদের কোনো বাস যদি ভাড়া বেশি নেয়, তাহলে আমাদের জানাবেন, আমাকে জানাবেন, ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে স্পটে উপস্থিত হব। অভিযোগ পেলেই আমরা সেখানে যাব। কোন কোন জায়গায় কারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, তা আমরা শনাক্ত করব।'
কোনো গণপরিবহণের বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে কী ব্যবস্থা নেবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে সেই গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেব। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'
মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের সড়কের তিনটি লেনই অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে। যার বড় প্রভাব পড়ে সড়ক চলাচলে। তার সমাধান না হলে ঈদে অনেকটা সময় কেটে যাবে ঢাকাতেই। এ নিয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, 'লক বা বস্নক করে রাস্তায় দাঁড়ানোর কোনো অধিকার আমাদের নেই। যারা অবৈধভাবে পার্কিং করবে সড়কে, আর যান চলাচল বিঘ্নিত করবে, তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে, আমাদের কোনো সমস্যা নেই।'
মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে তো সড়কই নেই, সড়ককেই টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি এখান থেকে বের হয়েই আগে মহাখালী যাব। দেখি সেখানে কি সমস্যা। আবারও বলছি, যারাই অবৈধ পার্কিং করছে, অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমরা।'