গ্যাস বিদু্যৎ নিয়ে উভয় সংকট
গ্যাসের বিকল্প জ্বালানিতে বিদু্যৎ উৎপাদনে ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি অন্যদিকে বিদু্যতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ালে বিপাকে পড়বে শিল্পখাত
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রেজা মাহমুদ
এখনো স্বাভাবিক করা যায়নি দেশের গ্যাস সংকট। বিশেষ করে রমজানে বিদু্যৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধিতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এতে সরবরাহ ঘাটতি বেড়েছে শিল্পসহ অন্যান্য উৎপাদনমুখী খাতে। বিশেষ করে বিদু্যৎ উৎপাদনে দেখা দিয়েছে উভয় সংকট। কারণ গ্যাসের বিকল্প জ্বালানিতে বিদু্যৎ উৎপাদনে ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি। অন্য দিকে বিদু্যতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ালে বিপাকে পড়বে শিল্পখাত।
এমনিতেই দেশে চাহিদার তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ গ্যাসের সংকট রয়েছে। তাই রেশনিং করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর সরবরাহকৃত গ্যাসের বড় অংশই ব্যবহৃত হয় বিদু্যৎ উৎপাদনে। তবু এখাতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না জ্বালানি বিভাগ। দেখা গেছে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্যাসের সরবরাহ বাড়েনি। বর্তমানে এখাতে গ্যাসের ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্য দিকে আগের মতোই সরবরাহ ঘাটতি অব্যহত রয়েছে শিল্পে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদু্যৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে শিল্পখাতে বিদ্যমান গ্যাস সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্য দিকে অন্যান্য জ্বালানিতে বিদু্যৎ উৎপাদন বাড়ালে গ্রাহকের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিবে। যেহেতু ফেব্রম্নয়ারি থেকে প্রতিমাসেই জ্বালানি ও বিদু্যতে ভতুর্কি কমিয়ে গ্রাহকপর্যায়ে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে, সে হিসেব এপ্রিলে বিদু্যতের দাম আরও এক দফা বাড়বে। এ অবস্থায় বর্ধিত বিদু্যতের চাহিদা মেটাতে এবং দাম সহনীয় রাখতে গ্যাসকেই প্রধান্য দেওয়া হতে পারে।
বর্তমানে দেশে বিদু্যতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট, যা এপিলের মধ্যে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যনুয়ায়ী বিদু্যৎ উৎপাদনে প্রায় ৬০ শতাংশই গ্যাসভিত্তিক। তবে চাহিদা আরও বাড়লে তেলভিত্তিক বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদন বাড়ানো হতে পারে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হলেও ডিজেলের দাম লিটারে মাত্র ৭৫ পয়সা কমেছে। ফলে তেল চালিত বিদু্যতে গ্রাহকের ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর বিকল্প হিসেবে গ্যাস আমদানি করা সুযোগ থাকলেও পরিবহণ ও অবকাঠোমগত সক্ষমতার কারণে তা দিয়ে বিদু্যতে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি সুযোগ কম বা নেই বললেই চলে।
এদিকে দেশের বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১১ হাজার মেগাওয়াটের বেশিই গ্যাসভিত্তিক। বিপিডিবির কর্মকর্তারা যায়যায়দিনকে জানান, বর্তমানে বিদু্যৎ উৎপাদনে প্রায় ১৩শ' মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ রয়েছে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো ফলে ঘাটতি মেটাতে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো চালু করতে হচ্ছে।
এদিকে বিপিডিবির কাছে বিদু্যৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা বেড়ে যাওয়ায় বিদু্যৎ বিভাগকে তাদের 'ম্যানেজ' করে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ছাড়া তেলভিত্তিক বিদু্যৎ উৎপাদনে গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
অন্য দিকে দেশের শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহে প্রাধান্য দেওয়া সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ গাজীপুর ও সাভার অঞ্চলের কারখানাগুলো। এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন নিম্নমুখী। আমদানি মাধ্যমে এই ঘাটতি মেটানো হলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত আমদানি গ্যাস পরিবহণ ও মজুদের বিদ্যমান অবকাঠামোগত সক্ষমতার চেয়ে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। এ অবস্থায় একমাত্র নিজস্ব গ্যাসের উত্তোলন বৃদ্ধি ছাড়া গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও শিল্প উদ্যোক্তা শহীদুলস্নাহ আজিম যায়যায়দিনকে বলেন, গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি গত দুই বছর ধরেই খারাপ। এখন যা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। অগ্রাধিকার দেওয়ার পরেও ৪০-৪৫ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহ মিলছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় ২ থেকে আড়াই গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তিন শিফটের পরিবর্তে মাত্র এক শিফট ফ্যাক্টরি চালাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্পসহ সামগ্রিক রপ্তানিখাত দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি রপ্তানি বাজার হারানোর শঙ্কাও রয়েছে।
এমনিতেই স্বাভাবিক অবস্থায় শিল্পখাতে বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের এলাকায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতি থাকে। এ ছাড়াও গ্যাসে চাপ এত কম থাকে। ফলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গ্যাসের ঘাটতি বিকল্প জ্বালানিতে মেটাতে হয়। এতেই উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। এ অবস্থায় যদি দীর্ঘমেয়াদে রেশনিং করে সরবরাহ করা হয় তাহলেও গড় ঘাটতি ৪০ শতাংশ থেকেই যাবে। আর এই ঘাটিত বিকল্প জ্বালানিতে মেটানোর সক্ষমতা অনেকেরই নেই। এতে বিদ্যমান ব্যাংক ঋণ পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে।
\হ